বোরকা পরে ডাকাতি, দুই কোটি টাকা ও মামলার নথি নিয়ে গেছে

বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
-67bdefaeeabe2.jpg)
বগুড়ায় ইতালি প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। বোরকা পরিহিত ডাকাতরা ঘরের ওয়্যারড্রপ ও ড্রেসিং টেবিলের তালা ভেঙে দুই কোটি টাকার অধিক বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, সাত ভরি সোনার গহনা এবং হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলার নথিপত্র নিয়ে গেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় শহরের লতিফপুর কলোনি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বিকালে এ খবর পাঠানোর সময় প্রবাসীর স্ত্রী তাজমিনা আকতার সদর থানায় মামলা করতে গেছেন।
ইতালি প্রবাসী হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী তাজমিনা আকতার জানান, তিনি প্রায় এক যুগ আগে শহরের নুরানি মোড় এলাকায় আইভি ক্লিনিকে অপারেশনের মাধ্যমে যমজ সন্তান (ছেলে ও মেয়ে) প্রসব করেন। ক্লিনিক থেকে তার ছেলে আহসান হাবিবকে চুরি বিক্রি করে বিক্রি করা হয়। তাকে জানানো হয়, মৃত ছেলে হয়েছিল; তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি ছেলের সন্ধান পান।
তিনি জানান, ছেলেকে ফিরে পেতে তিনি গত এক যুগ লড়াই করছেন। কয়েকবার কারাভোগ করেছেন। পেটের ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছে। ডিএনএ রিপোর্ট তার পক্ষে গেলেও আসামিদের প্ররোচনায় আদালত সংশ্লিষ্টরা সেটা নেগেটিভ দেখান। ফলে দীর্ঘদিনে বুকের ধন ছেলেকে ফিরে পাননি। তারা পুরো পরিবার ইতালির নাগরিক হলেও চুরি করা ছেলে আহসান হাবিবের কারণে প্রবাসেও যেতে পারছেন না। বর্তমানে মামলাটি তার অনুকূলে রয়েছে। তিনি মামলার কাজে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মামলার কাগজপত্র চুরি হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছিলেন।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের লতিফপুর কলোনিতে ভাড়া বাড়ির তৃতীয়তলায় মেয়ে বগুড়া ওয়াইএমসিএ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না আকতার একাই ছিল। এ সময় ৩-৪ জন বোরকা পরিহিত দুর্বৃত্ত দরজা খুলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তরা চাকু ধরে তামান্নাকে জিম্মি করার চেষ্টা করলে সে দৌড়ে একটি রুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। এরপর দুর্বৃত্তরা ওই রুমের দরজায় চাকু দিয়ে আঘাত করে ভয় দেখাতে থাকে ও দরজা খুলে দিতে হুমকি দেয়। তামান্না দরজা না খুলে রুমের বাথরুমে গিয়ে তাকে মোবাইল ফোনে ডাকাতির বিষয়টি জানায়। এ সময় তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। মেয়ে কণ্ঠস্বর শুনে ডাকাতদের মধ্যে বগুড়ার গাবতলীর নেপালতলি ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর গ্রামের আনোয়ারকে চিনতে পেরেছে।
তাজমিনা আকতার বলেন, দুর্বৃত্তরা মূলত তার সন্তান ফিরে পাওয়ার মামলা থেকে বাঁচতে নথিপত্র নিতে নারীর ছদ্মবেশে বোরকা পরে এসেছিল। এ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তারা শোকেস ও ওয়্যারড্রপের তালা ভেঙে মামলার সব নথিপত্রের পাশাপাশি নগদ ১৬ লাখ টাকা, আমেরিকান ডলার, ইতালির ইউরো ও লিবিয়ার মুদ্রা সবমিলিয়ে দুই কোটির অধিক টাকা এবং সাত ভরি সোনার গহনা নিয়ে যায়।
এদিকে খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ লাইনস এলাকার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় জনগণের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বনানী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ফজলে ইলাহি জানান, ইতালি প্রবাসীর স্ত্রী ও সন্তান ডাকাতির দাবি করছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি থানায় মামলা দিলে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মঙ্গলবার বিকালে প্রবাসীর স্ত্রী তাজমিনা আকতার জানান, সোমবার রাতে সদর থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা অভিযোগ দিতে বলায় তিনি ফিরে আসেন। মঙ্গলবার বিকালে মামলা করতে থানায় এসেছেন।