Logo
Logo
×

সারাদেশ

যশোরে ‘উন্মুক্ত’ টিসিবি পণ্য বিতরণে ভোগান্তি, খালি হাতে ফিরেছেন অনেকে

Icon

যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম

যশোরে ‘উন্মুক্ত’ টিসিবি পণ্য বিতরণে ভোগান্তি, খালি হাতে ফিরেছেন অনেকে

যশোরে উন্মুক্তভাবে (শুধু ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ভিত্তিতে) টিসিবি পণ্য বিতরণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেকেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তারা।

পণ্য বরাদ্দের চেয়ে লোক সমাগম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েন বিতরণকারী ডিলাররা। টিসিবির পণ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় উপচেপড়া ভিড় ছিল। কয়েক জায়গায় বিশৃঙ্খলা হওয়ায় পণ্য বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। টিসিবি পণ্য প্যাকেজে ছিল দুই কেজি তেল, পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি করে চিনি ও ডাল।

জানা গেছে, মঙ্গলবার যশোরের আট উপজেলা ও পৌরসভার ১৮৩টি স্থানে টিসিবির পণ্য বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু কয়েকটি স্থানে পণ্য বিতরণ হয়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উপশহর ইউনিয়নে টিসিবির কার্ডধারীর সংখ্যা ৯১৮ জন। ৪৬৮ জনকে টিসিবির পণ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সকাল ৮টা থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, ওয়ার্ড থেকে টিসিবির কার্ডধারী ও কার্ড বাদে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে শত শত মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে জড়ো হন। বেলা ৯টার দিকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই হাজারখানেক বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় জমে যায়। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ কার্ড বাদে ভোটার আইডি কার্ডেও টিসিবির পণ্য দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর কার্ডধারিরা হট্টগোল শুরু করে। হট্টগোলের কারণে পণ্য দেওয়া বন্ধ করে দেন।

বেলা ১২ টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার। এ সময় তিনি আগে কার্ডধারীদের পণ্য বিতরণ, তারপরে ভোটার আইডি কার্ডধারীদের পণ্য দেওয়ার নিদের্শনা দিয়ে চলে যান। 

এরপরই স্থানীয় কয়েকজন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এসে কার্ডধারিদের বাদ রেখে উন্মুক্ত করে টিসিবির পণ্য দেওয়ার নির্দেশনা দেন। তারপরও কার্ডধারী স্থানীয়রা বিক্ষোভ শুরু করলে উপ্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এদিন টিসিবির পণ্য বিতরণ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।  

দুপুরে সরেজমিন উপশহরে ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে দেখা যায়, শুনশান নীরবতা। দুজন গ্রামপুলিশ বসে আছেন। তাদের একজন বললেন, পণ্য বিতরণ হয়নি। লোকজন এসে ঝামেলা করায় ইউএনও স্যারের নির্দেশে টিসিবি পণ্য বিতরণ বন্ধ আছে।

টিসিবি পণ্য নিতে আসা উপশহর ইউনিয়নের এফ ব্লকের বাসিন্দা মিরাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় মোড়ে ছোট্ট বাজারে মাছের দোকান রয়েছে তার। মাছ বিক্রি করেই সংসার চলে। শুনেছি আজ থেকে আবার টিসিবি পণ্য দিবে। তাই প্যাকেট নিয়ে এসেছি; টিসিবির চাল, ডাল তেল নিব। এসে দেখি পরিষদ বন্ধ। কোথাও কোনো লোক নেই।

মিরাজুলের মতো এমন অবস্থা হয়েছে এই ইউনিয়নের শত শত মানুষের। হতদরিদ্র বিভিন্ন পেশার মানুষ এদিন কাজ ফেলে টিসিবির পণ্য নিতে এসে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

উপশহর ইউনিয়নের প্রশাসক হুমায়ন কবির  জানান, টিসিবি কার্ডবাদেই অনেকেই চলে আসেন। উন্মক্তভাবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে কার্ডধারীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এজন্য টিসিবির পণ্য বিতরণ সম্ভব হয়নি। ইউএনওর সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে আবার বিতরণ শুরু হবে। 

অপরদিকে, সদরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে দেখা গেছে, লম্বা লাইন। রোদে মাথায় ছাতা, কেউবা প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্তি হয়ে লাইন ছেড়ে পাশের ছায়ায় বসে থাকতে দেখা গেছে।

ছোট বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের চল্লিশোর্ধ রেশমা খাতুন প্রতিবেশী কয়েক ননদের সঙ্গে এসেছেন। বেলা আড়াইটার দিকে কথা হয় এই নারীর সঙ্গে। এই নারীর ভাষ্য- সেই সকাল আটটা থেকে দাঁড়িয়েছি। লম্বা লাইন। আগে কার্ড দিয়ে নিয়ে যেতাম। এখন কার্ড ছাড়াও দিচ্ছে। তাই এতো লাইন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে পড়েছি।

লাইনে দাঁড়ানো ঘুরুলিয়া এলাকার শামিমা খাতুন বলেন, আগে কার্ড দিয়ে নেওয়ার মধ্যে একটা সিস্টেম ছিলো। কার্ডে এন্ট্রি করতাম; আর টাকা দিলেই পণ্য দিয়ে দিত। এখন গড়ে সবাইকে  দেয়ায় অনেকেই পণ্য পাচ্ছে না। পণ্যের চেয়ে মানুষ বেশি। একটা সিস্টেমে আসা উচিত।

নওয়াপাড়া ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার এবি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রুবায়েত ফেরদৌস জানান, এখানে হাজার হাজার মানুষ। আমার কাছে ৫৬৭ জনের পণ্য রয়েছে। এত লোককে দিব কিভাবে। যারা আগে আসবে বা যতক্ষণ পণ্য থাকবে তাদেরই দেওয়া হবে। অনেকেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভোগান্তি হলেও আমাদের কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম হলো যারা কার্ডধারী তারা পাবে। আর কার্ডধারীরা উপস্থিত না থাকলে ভোটার আইডি কার্ডধারী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলে তাদের পণ্য দেওয়া হবে। আমরা জেলায় সব টিসিবি কার্ডধারীদের পূর্ণাঙ্গ স্মার্ট তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু করছি। যতদিন আমাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হবে না, ততদিন এই প্রক্রিয়ায় পণ্য বিতরণ করা হবে। যারা কার্ডধারী না তাদের বিশৃঙ্খলা না করে নিয়মের ভিতরে আসতে হবে। উপশহর ইউনিয়নের দ্রুতই পণ্য বিতরণ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম