চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি, ডাকাত সর্দারসহ দুই ভাই গ্রেফতার

যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনার পরিকল্পনাকারীসহ মূলহোতাসহ দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই সঙ্গে তাদের হেফাজতে থাকা লুন্ঠিত টাকা, মোবাইল সেট, গহনা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান তার সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।
নেত্রকোনার পূর্বধলার সাধুপাড়া গ্রাম থেকে ডাকাতির পরিকল্পনাকারী ডাকাত সর্দার আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া থানার ধানসোনা এলাকা থেকে রাজীব হোসেনকে (২১) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা দুই ভাই। তারা মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার আমতলী গ্রামের খোরশেদ শেখের ছেলে।
পুলিশ রাজীবের হেফাজতে থাকা ১০টি মোবাইল সেট, মহিলা যাত্রীদের ৫ জোড়া চুরি, তিনটি ব্যাগ, তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি এটিএম কার্ড, বাসের টিকিট এবং ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি ছুরি উদ্ধার করেছে।
এর আগে গত শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় মো. শহিদুল ইসলাম মুহিত (২৯) মো. সবুজ (৩০) ও মো. শরিফুজ্জামান শরীফকে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য এবং গুপ্তচরদের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাস ডাকাতির পরিকল্পনাকারী হলো ডাকাত সর্দার আলমগীর হোসেন এবং সেকেন্ড ইন্ড কমান্ড হলো শহিদুল ইসলাম মুহিত।
জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ইউনিক রয়েল আমরি ট্রাভেলস নামক বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। বাসটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল।
বাসের যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটিতে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডাকাতি ও দুই নারীর শ্লীলতাহানি করে ডাকাত দল।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর যাত্রীরা বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে থানা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এ সময় ডাকাতিতে জড়িত সন্দেহে বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) ও হেলপার মাহবুব আলমকে (২৮) আটক করে ৫৪ ধারায় নাটোর আদালতে পাঠায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। ঘটনার তিন দিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামে এক যাত্রী মামলা করেন।
মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে এবং মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মো. শহিদুল ইসলাম মুহিত, মো. সবুজ এবং মো. শরীফুজ্জামান শরীফকে গ্রেফতার করে।
এ নিয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় মামলা হওয়ার পরই আমাদের টিম মাঠে কাজ শুরু করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের একটি টিম সাভারে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে। সোমবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয় আলমগীর হোসেন ও রাজীব হোসেনকে।
পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের নখদর্পণে চলে এসেছে। এ ঘটনায় মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে দায়িত্বে অবহেলা করার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয়েছে। এর আগে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়।