Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘আত্মগোপনে’ থেকেও ২ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আ. লীগ নেতা

Icon

এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৩ এএম

‘আত্মগোপনে’ থেকেও ২ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আ. লীগ নেতা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ জহুরুল আলম জসিম। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে রয়েছেন। আর এ অবস্থায় বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল ২০২৩ সালে পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে গেলে তার হামলার শিকার হন। আওয়ামী লীগ আমলে পাহাড় দখল করে প্লট বাণিজ্য করেছেন আর এভাবে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।

জানা যায়, ‘আত্মগোপনে’ থাকা জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে নগরীর আকবরশাহ, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, কোতোয়ালি ও সদরঘাট থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে ঠিকই তিনি মামলা করে যাচ্ছেন আদালতে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও ভিন্নমতের মানুষদের দমাতে মামলা-হামলা করে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এ সময় পাহাড় দখল ও প্লট বাণিজ্যের মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক বনেছেন জসিম। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৩ ফেব্রুয়ারি নিজেই বাদী হয়ে মিস মামলা করেন সাবেক কাউন্সিলর জসিম। সেই মামলায় দুজনকে বিবাদী করা হয়। তারা হলেন, কামরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে-১২ ফেব্রুয়ারি জসিমের আমমোক্তারকৃত জায়গায় প্রবেশ করে সীমানা প্রাচীর ভেঙে সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলে বিবাদীরা। এছাড়া মূল্যবান গাছপালা কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় জসিম তার লোকজন নিয়ে বাধা দিলে বিবাদীরা চলে যেতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে আইনগত প্রতিকারের আবেদন করা হয়। যদিও গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন চসিকের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এই জহুরুল আলম জসিম।

নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকার লেকসিটি, বিশ্বকলোনী, শাপলা, হারবাতলী, জয়ন্তিকা ও সুপারিবাগান এলাকায় পাহাড় কেটে প্লট নির্মাণ করেন জসিম। সেসব প্লটে বিদ্যুৎ, ওয়াসার পানি ও কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাস সংযোগও নেওয়া হয়েছে। আবার এসব প্লটে যেতে সিটি করপোরেশনের টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক সড়কও। এসব সড়ক তৈরি করতে গিয়ে একাধিক পাহাড় কাটা হয়েছে। দীর্ঘ সময় পাহাড় কাটার এ মহোৎসবে তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন চসিকের সাবেক দুই মেয়র।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ভিন্নমতের কেউ এলাকায় থাকতে পারেননি। তাদেরকে মামলা ও হামলা করে এলাকাছাড়া করা হতো। সম্প্রতি করা মিস মামলার দুই বিবাদী আইনজীবী কামরুল ইসলাম আকবরশাহ থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মোহাম্মদ মহিউদ্দিন একই কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক।

অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক কাউন্সিলর জসিম আমাদের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা করে এলাকাছাড়া করেছেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পরও তিনি থামেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় এখনো তিনি আকবরশাহ থানা এলাকায় রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছেন।’

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের আগে ও পরে কাউন্সিলর জসিম আমার বিরুদ্ধে আটটি মামলা করেছেন। জেলেও যেতে হয়েছে। বর্তমানে ইয়াছমিন আক্তার নামে এক নারী জসিমের হয়ে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করছেন। সেখানে গরু চুরির অভিযোগে আমাকে ও আমার ভাইকেও আসামি করা হয়েছে।’

সূত্র আরও জানায়, কাউন্সিলর জসিমের রোষানল থেকে পরিবেশ কর্মীরাও বাদ যায়নি। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে গেলে জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের হামলার শিকার হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। তারা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোড়ে ও হুমকি দেয়। ওই ঘটনায় রিজওয়ানা হাসান আকবরশাহ থানায় জসিমসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ জুন ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

জহুরুল আলম জসিম আত্মগোপনে আছেন, এমন খবরে ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতভর নগরীর আকবরশাহ থানার একে খান মোড়ে ‘গ্রিন গুলবাহার টাওয়ার’ নামক একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনে অভিযান চালায় পুলিশ। রাতভর ভবনটির প্রতিটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে জসিমকে পাওয়া যায়নি। তার ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীকে পরদিন গ্রেফতার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম