ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে বিপাকে নারী

মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৬ পিএম

মাদারীপুরে ধর্ষণের শিকার এক নারী বিচার চাইতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ওই নারীর দাবি, অচেতন করে ধর্ষণ করে মোবাইল ফোনে তা ধারণ করে ওই ধর্ষক। এরপরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া কথা বলে বারংবার তাকে ধর্ষণ করা হয়। নেওয়া হয় টাকাও। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও তার পরিবার ভুক্তভোগীকে দিচ্ছে হুমকি। এমনকি ধর্ষকের মোবাইলও জব্দ করতে পারেনি পুলিশ। ধর্ষকের মোবাইল থেকে ছবি নিয়ে ছাড়া হচ্ছে সোশ্যাল প্ল্যটফর্মে। এতে মানসিক ও শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ভুক্তভোগী নারী।
এ ঘটনায় গত শনিবার মাদারিপুরে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপরেই
বিষয়টি নিয়ে শহরে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলন করার সময় মামলার তদন্তকারী
কর্মকর্তা ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে শাসিয়েছে বলেও জানান ওই নারী।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামের
বাসিন্দা শুভ (৩০) তার আত্মীয় হয়। এ সুবাদে পেশায় প্রাইভেট কার চালক শুভ মাঝেমধ্যে
তার বাবার বাড়ি আসত। পারিবারিক প্রয়োজনে শুভর গাড়ি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেত
তারা।
পারিবারিক খুটিনাটি বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় ওই নারীর। একপর্যায়ে তাদের মাঝে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সুযোগে শুভ ভুক্তভোগীকে স্বামীর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার কথা বলে। স্বামীর বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের করে ওই নারীকে। পরে শহরের পাকদী এলাকায় গিয়ে গাড়ির মালিকের বাসায় একটু কাজ আছে বলে গাড়ি থামায়। তখন ওই নারীর মুখমণ্ডলে একটি রুমাল দিয়ে চেপে ধরে শুভ। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়ে।
পরে নিজেকে শহরের পাকদী এলাকার কাইয়ুম মিয়ার বাড়িতে আবিষ্কার করে ওই
নারী। তাকে কেন এ বাড়িতে আনা হয়েছে জানতে চাইলে শুভ ধর্ষণের ভিডিও ও অশ্লীল ছবি দেখায়।
ঘটনাটি কাউকে জানাতেও নিষেধ করে। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও
দেয়।
সম্মান বাঁচাতে ভুক্তভোগী বিষয়টি গোপন রাখে। শুভকে ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও
মুছে ফেলতে অনুরোধ করে। তবে তা না করে শুভ ওই নারীকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে করতে
থাকে শারীরিক সম্পর্ক। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে রাজধানী ঢাকাতে বাসা ভাড়া নিয়ে
কিছুদিন বসবাসও করে।
শুধু শারিরীক সম্পর্ক করেই ক্ষান্ত হয়নি শান্ত। বিভিন্ন সময় ওই নারীর থেকে টাকা দাবি করত তিনি।
বাধ্য হয়ে শুভকে টাকা দিত ওই নারী। এভাবে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা
হাতিয়ে নেন তিনি। ভুক্তভোগী ও তার বোনের নামে এনজিও থেকে তুলে টাকাও। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীর
স্বামীকে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে শুভ।
বিষয়টি শুভ এর পরিবারকে জানালেও তারা এতে কর্ণপাত করেনি। অবশেষে এ ঘটনায়
গত ৯ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর সদর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করে ভুক্তভোগী। পরে পুলিশ শুভকে
গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘মামলার পর পুলিশ আমার মোবাইল জব্দ করলেও শুভ এর মোবাইল জব্দ করতে পারেনি। মামলা তুলে নিতে শুভর পরিবার আমাকে হুমকি দিচ্ছে। শুভর স্ত্রী আমার কিছু অপ্রীতিকর ছবি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ নিশ্চুপ অবস্থায় রয়েছে। শুভর মোবাইল জব্দ করতে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি এর প্রতিকার চাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদারীপুর মডেল সদর থানার এসআই কামরুল ইসলাম
বলেন, ‘আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের মেডিকেল
করানো হয়েছে। আসামি শুভর ডিএনএ করানোর ব্যবস্থা করেছি। এগুলোর রিপোর্ট আসলে মামলার
পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
আসামির মোবাইল জব্দ করা যায়নি। ভিকটিমের মোবাইল সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে
রেকর্ড চেক করার জন্য। ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
সংবাদ সম্মেলনের সময় ফোন দিয়ে শাসানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
‘আমি এমনটি করিনি।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর মডেল সদর থানার ওসি মোকসেদুর রহমান বলেন, ‘মামলার
বাদী এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। আসামির মোবাইল জব্দের চেষ্টা চলছে।
’