কুয়েটে সংঘর্ষ
শিক্ষার্থীদের গুলি করেছিল বহিরাগত ছাত্রদল-যুবদলের সদস্যরা

খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৪ এএম

ছবি: যুগান্তর
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা গেছে। ১৮ ফেব্রুয়ারির এই সংঘর্ষের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছিল। খানজাহান আলী হলের বিপরীত পাশের একটি গলির ভেতর থেকে কালো হেলমেট ও কালো প্যান্ট পরা এক যুবককে অস্ত্র দিয়ে কুয়েটের দিকে গুলি করতে দেখা গেছে। এছাড়া হামলায় জড়িত ছিল বলে কুয়েটের আশপাশের এলাকার একাধিক যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করা গেছে।
শনিবার কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৬ দফা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ দিনের কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে গোটা ক্যাম্পাস ঘুরে বিক্ষোভ মিছিল এবং শহিদ মিনার চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিমিয় করেন। পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল তাদের ছবিসহ পোস্টার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়।
বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বে সংবাদ সম্মেলনে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা যে ৬টি দাবি করেছিলাম সেটা মানেনি প্রশাসন। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালককে বর্জন করা হয়েছিল। বুধবার থেকে একাডেমিক ভবনগুলোতে তালাও মারা হয়েছে। নতুন প্রশাসন চাই আমরা।
শুক্রবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনেও তালা মারা হয়েছে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদল ও যুবদলসহ বহিরাগতরা জড়িত অথচ তাদের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। শুক্রবার রাতে কুয়েটের নতুন প্রশাসনের দাবিকরাসহ ৬ দফা দাবির বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের মতো কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও ওপর হামলা করা হয়েছে। অথচ প্রশাসন এখনো কাউকে আটক করতে পারিনি। এমনকি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এখনো যোগাযোগও করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কর্মসূচির অংশ হিসাবে রোববার (আজ) সকাল সাড়ে ৬টায় একটা সংবাদ সম্মেলন করা হবে এবং সাতটার সময় তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করবেন।
এদিকে শুক্রবার রাতে কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন এক বিবৃতিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর নিন্দা জানান। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাতে উপাচার্যসহ একাধিক শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় বেশ কিছু ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীকে চিহ্নিত করে ক্যাম্পাসে পোস্টার লাগিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুয়েটের শিক্ষার্থী ইফাজ, রাহুল জাবেদ এবং রাজিন। বহিরাগতদের মধ্যে রয়েছে যুবদল নেতা রাসেল, রাকিব, হেলাল, আরিয়ান খান ইমতিয়াজ, মাসুম এবং তানভীর। এছাড়া দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে ওইদিন দেশীয় অস্ত্র হাতে মুখে গামছা লাগানো অবস্থা দেখা যায়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় যুবদল তাকে বহিষ্কার করে।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, কুয়েট প্রশাসন বুধবার রাতে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আসামি আটক করতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। সংঘর্ষের দিন ৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তারা সবাই প্রিজন সেলে রয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ জানান, তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করা কঠিন। কারণ পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি। তদন্তে আরও সময় লাগতে পারে।