Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুয়েটে হামলাকারীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি

Icon

খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম

কুয়েটে হামলাকারীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে সংঘর্ষের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। কুয়েটের খানজাহান আলী হলের বিপরীত পাশের একটি গলির ভেতর থেকে কালো হেলমেট ও কালো প্যান্ট পরা এক যুবককে অস্ত্র দিয়ে কুয়েটের দিকে গুলি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া কুয়েটের আশপাশের এলাকার একাধিক যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হামলায় ছিল বলে চিহিৃত করা গেছে।

শনিবার বেলা ১২ টায় কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৬ দফা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে চতুর্থ দিনের কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে সমগ্র ক্যাম্পাস ঘুরে বিক্ষোভ মিছিল এবং শহিদ মিনার চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিমিয় করেন। পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল তাদের ছবিসহ পোস্টার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়। 

এদিকে গত বুধবার রাতে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে খানজাহান আলী থানায় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল তাতে এখনও কেউ আটক হয়নি। পাশাপাশি কুয়েটের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে বলে জানা গেছে। 

বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বে এবং সংবাদ সম্মেলনে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েটের সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা যে ছয়টি দাবি করেছিলাম সেটা মানেনি প্রশাসন। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালককে বর্জন করা হয়েছিল।

বুধবার থেকে একাডেমিক ভবনগুলোতে তালাও মারা হয়েছে। নতুন প্রশাসন চাই আমরা। শুক্রবার রাতে উপাচার্যের বাসভবনেও তালা মারা হয়েছে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদল ও যুবদলসহ বহিরাগতরা জড়িত অথচ তাদের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। শুক্রবার রাতে কুয়েটের নতুন প্রশাসনের দাবিসহ ছয় দফা দাবির বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি আকারে পাঠানো হয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, জুলাই আগস্টের মতো কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। অথচ প্রশাসন এখনও কাউকে আটক করতে পারিনি। এমনকি উপদেস্টা পরিষদ থেকে এখন যোগাযোগও করা হয়নি। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আমরা ক্যাম্পাসের হলগুলোতে অবস্থান করছি। কারণ আমরা বাইরে যেতে পারছি না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। 

এদিকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধসহ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের, তদন্ত কমিটি গঠন, যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারসহ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের ছয় দফার আংশিক মেনে নেওয়া হয়েছে। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কারা জড়িত সেটা শনাক্ত করে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা উপাচার্য এবং উপ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে।

শিক্ষক সমিতি

শুক্রবার রাতে কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন এক বিবৃতিতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানান। পাশাপাশি শিক্ষার্থী কতৃক উপাচার্যসহ একাধিক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর অসহযোগিতার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ওপর চাপানো এবং প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মব জাস্টিসের মাধ্যমে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালককে পদত্যাগে বাধ্য করার অপচেষ্টা ক্যাম্পাসের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যহত করবে। পাশাপাশি বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে জানান।

সংঘর্ষে জড়িত যারা

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় বেশ কিছু ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীদের চিহিৃত করে গতকাল ক্যাম্পাসে পোস্টার লাগিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুয়েটের শিক্ষার্থী ইফাজ, রাহুল জাবেদ এবং রাজিন। বহিরাগতদের মধ্যে রয়েছে যুবদল নেতা রাসেল, রাকিব, হেলাল, আরিয়ান খান ইমতিয়াজ, মাসুম এবং তানভীর। এ ছাড়া দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে ঐদিন দেশীয় অস্ত্র হাতে মুখে গামছা লাগানো অবস্থা দেখা যায়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় যুবদল তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।   

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, কুয়েট প্রশাসন বুধবার রাতে অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আসামি আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংঘর্ষের দিন পাঁচজনকে আটক করা হয়েছিল। তারা সকলেই প্রিজন সেলে ভর্তি রয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ জানান, তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করা কঠিন। কারণ পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি। একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা মারার কারণে আমরা মেডিকেল সেন্টারে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তে আরও সময় লাগতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলবে কি না এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের সমর্থকরা বহিরাগতদের নিয়ে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ সময় কুয়েটের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপর বুধবার কুয়েটের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়েটের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম