চলন্তবাসে বাসে জিম্মি করে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি, মামলা

টাঙ্গাইল ও মির্জাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের জিম্মি করে শ্লীলতাহানির ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে বাসটির যাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চশবড়াইগ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে ওমর আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৮ থেকে ৯ জনকে।
বাসটিতে দুজন নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানি এবং সকল যাত্রীর কাছ থেকে টাকা
ও মালামাল লুটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজলার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে
যাত্রী নিয়ে বাসটি ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম
যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। রাত ১২টার দিকে বাসটি
সাভারের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে। এ সময় বাসটিতে আরও ১০ থেকে ১২ জন উঠে।
বাসটি গাজীপুরের চন্দ্রা বাইপাসে পৌঁছালে চা বিরতির জন্য থামে। সেখানে
১০-১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে আরও তিন থেকে চারজন নতুন যাত্রী নিয়ে রওনা করে বাসটি। রাত দেড়টার
দিকে কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার
পর বাসে যাত্রী বেশে থাকা ৮ থেকে ৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায়। সে সময় ধারালো চাকু
ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সকলকে চুপ থাকতে বলে।
এ সময় তাদের মধ্যে তিনজন ডাকাত গাড়িচালকের গলায় ছুরি ধরে তাকে চালকের
আসন থেকে সরিয়ে দেয়। ডাকাতদের মধ্যে থেকে একজন চালকের আসনে বসে বাসটি চালাতে থাকে।
বাসটি মির্জাপুর উপজেলায় পৌঁছালে ডাকাতেরা যাত্রীদের থেকে টাকা, মেবাইলসহ দামী মালামাল
নিয়ে নেয়।
পরে ডাকাতদলের সদস্যরা মির্জাপুরের নাটিয়াপাড়া নাছির গ্লাসের সামনে থেকে
ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা করে। তারা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের কালিয়াকৈর,
কোনাবাড়ীসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরায়। এ সময় দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানি করা
হয়।
এজহারে আরও বলা হয়, সকল যাত্রীদের টাকাসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে রাত
৪টার দিকে বাড়ইপাড়া এলাকার নন্দন পার্কের সামনে গাড়িটি ফের ঘুরিয়ে টাঙ্গাইলমুখী করা
হয়। এ সময় ডাকাতেরা বাসটি থেকে নেমে যায়। পরবর্তীতে চালক গাড়ি নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে
যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানায়। কিছুক্ষণের মধ্যে
টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। তখন গাড়িতে থাকা যাত্রীরা ডাকাতির বিষয়ে বিস্তারিত জানালে
টহলরত পুলিশ মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন।
যাত্রীরা ও গাড়ির সুপারভাইজার মির্জাপুর থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে বিষয়টি
মৌখিকভাবে জানিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা মোড়ে গেলে
গাড়ি থেকে তিন থেকে চারজন যাত্রী নেমে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে
আটক করে। বিষয়টি বড়াইগ্রাম থানা পুলিশকে জানানো হলে তারা ওই তিনজনকে আটক করে নিয়ে যায়
ও মামলা দেয়। সেদিনই জামিনে বের হয়ে আসেন ওই তিনজন।
মামলার বাদী ওমর আলী বলেন, ‘মামলার এজহারে আমি স্বাক্ষর করেছি। এ মামলায়
আট থেকে নয়জন অজ্ঞাতনামা ডাকাতদলের সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। বাসে থাকা সকল যাত্রীদের
কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ও মালামাল লুট করে তারা। বাসটিতে সাত থেকে আটজন নারী যাত্রী
ছিল। এদের মধ্যে দুজনকে শ্লীলতাহানি করা হয়।’
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন,
‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’