Logo
Logo
×

সারাদেশ

৪৭ বছরের পুরনো স্কুল বন্ধের পথে

Icon

বান্দরবান (দক্ষিণ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম

৪৭ বছরের পুরনো স্কুল বন্ধের পথে

প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৪৭ বছরের পুরনো। তবে দিনকে দিন এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত হারে কমছে। এমনকি, বিদ্যালয়টির অনেক শিক্ষার্থী বর্ণমালাই চিনেন না।  ঠিক মতো স্কুলে আসেন না শিক্ষকরাও। এমন প্রেক্ষাপটে বন্ধ হওয়া মুখে বিদ্যালয়টি। বলছিলাম বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ড পূর্বচাম্বি মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার মূল কারণ শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকদের গাফেলতি। কারণ শিক্ষকেরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেন না। আর শিক্ষা অফিসও বিষয়টি তদারকি করে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুরো বিদ্যালয়টি ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে এভাবে চলছে বিদ্যালয়টি। ঠিক মতো শিক্ষক না আসা ও  ক্লাস না হওয়া বিদ্যালয়টার জন্য নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ে অনেকগুলো শ্রেণিকক্ষ থাকার পরও বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে বসিয়ে ক্লাস নেন শিক্ষক।

পূর্বচাম্বি মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক থাকলেও একই দিনে তিন শিক্ষক আসেন না বলে জানান স্থানীয়রা। তারা বলেন, একেক দিন এক শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে আসেন।

বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনজন নিয়মিত শিক্ষকের মধ্যে দুজন শিক্ষক এসেছে। তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন নামের একজন শিক্ষক বিভিন্ন ক্লাসের মাত্র ১০ শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে নিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের বাহিরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এদিক ওদিকে হাঁটাহাটি করছেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা চেক করে দেখা যায়, শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হাজিরা খাতায় মোট ১০২ শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে। তবে সরেজমিনে পুরো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে মাত্র ১০ জন।

বিদ্যালয়ের বাহিরে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের কাছ থেকে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা জানতে চান এ প্রতিবেদক। তবে সঠিকভাবে বর্ণমালা বলতে পারেনি এসব শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টা পর্যন্ত একজন শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে উপস্থিত হননি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘তিনি কোনো ছুটি নেননি। কিছু বললে এক সময় আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখাতো। এখন জামায়াতের ক্ষমতা দেখায়।’

মোবাইল ফোনে অনুপস্থিত সহকারী শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা বলেন, ‘আমি বান্দরবান থেকে আসতেছি। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় দেরি হয়ে গেছে।’ তবে বিগত এক সপ্তাহের মধ্যে ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে আসতে দেখেননি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি কেন প্রধান শিক্ষক কে এম জসিমুল আলমকে এমন প্রশ্ন করা হলেও তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক ফারুক বলেন, ‘১০ টা বা ১১ টার দিকে গেলে কোনো শিক্ষককে পাওয়া যায় না। ১০ বা ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থীও নাই বর্তমানে। শিক্ষকদের কল দিলে তারে কেউ বলে বাড়িতে, আবার কেউ বলে অফিসিয়াল কাজে উপজেলায়। বলতে গেলে এখানে কোনো লেখাপড়াই হচ্ছে না।’

বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইউসুফ বলেন, ‘এক সময় আমাদের স্কুলে তিনশ থেকে চারশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করত। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা অফিস এবং শিক্ষকদের অবহেলার কারণে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।’

স্থানীয় আরেক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুলটা শুধু সরকারি নামে আছে কোনো কাজে নাই।’

এ বিষয়ে লামা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘আমাকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। বিষয়টা নিয়ে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম