Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভাষাসৈনিক মতিন পাঠাগার এখন নেশাখোরদের দখলে, বইসহ সব আসবাবপত্র আত্মসাৎ

Icon

বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ এএম

ভাষাসৈনিক মতিন পাঠাগার এখন নেশাখোরদের দখলে, বইসহ সব আসবাবপত্র আত্মসাৎ

ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের স্মরণে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নির্মাণ করা হয় পাঠাগার। সেই পাঠাগারে বর্তমানে নেই কোনো বই। নেই পাঠকও। নেশাখোরদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে পাঠাগারটি। স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও জানেন না এখানে কোনো পাঠাগার রয়েছে কি না। একইসঙ্গে পাঠারগারটির দেড় হাজারের বেশি বইসহ সব আসবাবপত্র আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে পুলিশ বলছে, তারা কিছুই জানে না।

সরেজমিন দেখা যায়, যমুনার দুর্গম শৈলজানা চরে অবস্থিত উমারপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি চারচালা পুরনো টিনের ঘর। দেখলে বুঝার উপায় নেই এটা পাঠাগার। নেই কোনো সাইনবোর্ডও। ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায় ঘরটিতে থাকা চৌকিতে শুয়ে বিড়ি টানছেন একজন। ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বিড়ির খোশা এবং খালি বোতল। ময়লা ও ঘরজুড়ে উৎকট দুর্গন্ধ।

১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের ধুবুলিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল ও আমেনা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল মতিন। ১৯৪৮ সালের প্রথম ভাষা আন্দোলনের সময়েই ২৪ মার্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কনভোকেশনের ভাষণে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা হবে, কথাটা উচ্চারণের পর পর মতিনের কণ্ঠ থেকেই প্রথম উচ্চকণ্ঠের প্রতিবাদ ‘নো নো’ ধ্বনিত হয়েছিল।


মতিনের স্মরণে জন্মভূমি এলাকার চাঁন্দইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্ত্বরে ২০১০ সালের দিকে বেসরকারি এনজিওর অর্থায়নে একটি শহীদ মিনার ও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়। সেখানেই প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে নানা আয়োজনে শ্রদ্ধা জানাতো যমুনার চরাঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

তবে ২০১৪ সালে যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় শহীদ মিনার ও বিদ্যালয় ভবন। পাঁচ বছর পর একই চরের শৈলজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্ত্বরে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যমুনার ভাঙনে সেটিও বিলীন হয়ে যায়। গত বছর নতুন করে পাঠাগার ঘরটি নির্মাণ হলেও সেখানে কোনো বই কিংবা আসবাবপত্র কিছুই নেই। ধুমপায়ী ও ভবঘুরে মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে ঘরটি।

পাঠাগার ঘরের পাশে নির্মিত শৈলজানা নিন্ম মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এখানে পাঠাগার আছে সেটা জানতাম না। এ ঘরে মানুষজন এসে ধুমপান ও শুয়ে বসে আড্ডা দেয়।

ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন পাঠাগার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন শৈলজানা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা। তিনি জানান, পাঠাগারটি প্রায় সাড়ে ৪লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে নদীতে বিলীনের পর স্থানীয় আব্দুল হাকিম মেম্বার দেড় হাজার বই, বই রাখার আসবাব, চেয়ার-টেবিল তার বাড়িতে নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে বারবার বলার পরে সেগুলো এখনো ফেরত দেয়নি।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে হাকিম মেম্বারের মোবাইলে বারবার কল দেওয়া হলেও তা তিনি রিসিভ করেননি।

ভাষাসৈনিক মতিনের নাতি গোলাম মোহাম্মদ অভি বলেন, ‘যমুনা চরে দাদুর (ভাষা মতিন) নামে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারের কোনো অস্তিত্ব নেই। বই ও আসবাবপত্র আত্মসাতের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাঠাগারটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।’

ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের কর্ম ও চিন্তা নিয়ে গবেষণা করা গবেষক হান্নান মোর্শেদ রতন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষররা ভাষা মতিনের জন্মভূমিতে কোনো উন্নয়ন করেনি। ভাষা মতিন পাঠাগারটি রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে নেশাখোড়দের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।’

চৌহালী থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘শৈলজানা চরে ভাষা মতিনের নামে পাঠাগার আছে জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ কখনও অভিযোগও করেনি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া কথা বলতে রাজি হননি। তবে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম