
বিএনপির প্রতিবাদের মুখে বরিশালের আলোচিত এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসানকে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকী।
এর আগে ওই বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক পদে রোকেয়া বেগম নামে এক গৃহবধূর নাম প্রস্তাব করা হলে তার প্রতিবাদ জানায় বিএনপি। আলোচ্য রোকেয়া বেগম ফ্যাসিস্ট পরিবারের সদস্য ও তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা উল্লেখ করে ওই প্রতিবাদ জানায় দলটি।
এ নিয়ে বিক্ষোভ, শিক্ষা বোর্ড ঘেরাওসহ নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলো।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান রতন বলেন, রোকেয়া বেগমের পরিবারের প্রায় সবাই নানাভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার স্বামী প্রয়াত আব্দুস সালাম ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। তার দেবর নাজমুল হুদা ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আগস্ট বিপ্লবের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি। আরেক দেবর জিয়াউল হাসান কবির ২৪নং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, অন্য দুই দেবর শওকত আকবর এবং নজরুল ইসলাম নান্টুও ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। পরিবারের সবাই যেখানে ফ্যাসিবাদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সেখানে সেই পরিবারের একজনকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক পদে মেনে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে একাধিকবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে যাওয়া কয়েকজন বিএনপি নেতা বলেন, যেহেতু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর নাম সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে তাই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে ফ্যাসিস্ট বাদ দিয়ে যোগ্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছি। বিষয়টিকে অনেকে শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও হিসেবে দেখেছে। আমাদের দাবি ছিল গণতন্ত্রের পক্ষের কাউকে দায়িত্বে আনা।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, রোকেয়া বেগমের নাম বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করাই কেবল নয়, সেখানে অনুমতি ছাড়াই আমার নাম তালিকার ২ নম্বরে রাখার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে ষড়যন্ত্রী মহল। তাছাড়া ফ্যাসিস্ট পরিবারের একজনের নামের নিচে আমার নাম দেওয়ার সাহস তারা কোথায় পেল? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে হয় তৃতীয় কাউকে অথবা আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছি। কোনো ফ্যাসিস্টকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া মেনে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সর্বশেষ শুনেছি যে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটা আমাদের ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াইয়ের আরেকটা জয়। আমি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে স্বাগত জানাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকি বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের প্রস্তাবনা আসে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তর থেকে। এখানে তো আমার কিছু করার নেই। তবে বিএনপি নেতারা প্রতিবাদ জানানোর পর জটিলতা এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি আর কোনো সমস্যা হবে না।