ট্রেনে কাটা পড়ে আখাউড়ায় এক বছরে ৩৫ জনের মৃত্যু

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম

পূর্বাঞ্চল রেলপথের আখাউড়ায় গত এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২৬ জন পুরুষ, ৯ জন নারী ও দুজন শিশু। নিহতদের বেশিরভাগ অজ্ঞাত পরিচয়ের।
এসব ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ৩৪টি অপমৃত্যু ও একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানা সেকশনের আখাউড়া-আশুগঞ্জ, আখাউড়া-মন্দবাগ ও আখাউড়া-মুকুন্দপুরের ১শ কিলোমিটার রেলপথের বিভিন্ন স্থানে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আখাউড়া রেলওয়ে থানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার অপমৃত্যু রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে ৩৫ জন রেলে কাটা পড়ে মারা গেছেন। ওই বছরের শুরুতে পহেলা জানুয়ারিতে রবিউল ইসলাম (৪২) নামে আখাউড়া রেলওয়ের এক কর্মচারীর ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়। ওই মাসে ৪ জন পুরুষ ট্রেনে কাটা পড়েন। বাকি ৩ জন অজ্ঞাত পরিচয়।
গেল বছর সবচেয়ে বেশি ট্রেনে কাটা পড়ে সেপ্টেম্বর মাসে। এক মাসে ৮ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ১ জন অজ্ঞাতনামা শিশু রয়েছে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি ও জুন মাসে কেউ ট্রেনে কাটা পড়েনি। তবে এপ্রিল মাসে ২ জন অজ্ঞাতনামা পুরুষের লাশ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি, এক মাসে ৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন অজ্ঞাতনামা নারী রয়েছে। বাকি ৩ জন পুরুষের মধ্যে পরিচয় পাওয়া ফরিদ মিয়াকে (৭০) তার পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার গোকর্ন উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। অন্যরা অজ্ঞাত পরিচয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে ওঠানামা, ছাদে ভ্রমণ, দুই বগির সংযোগ স্থলে বসা, ট্রেনের দরজার হাতলে ঝুলে যাতায়াত, রেল লাইনের পাশ দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে হাঁটা বা লাইনে বসে থাকা, অবৈধ রেলক্রসিং ও অসর্তকভাবে রেললাইন পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা (সিআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটাহাঁটি করা অথবা লাইনে বসে গল্পগুজবে মশগুল থাকায় অনেকেই ট্রেন দুঘর্টনার শিকার হন। এসব বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং রেলপুলিশ যৌথভাবে প্রতি মাসেই সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।
এছাড়াও রেলস্টেশন, রেললাইন সংলগ্ন এলাকার মসজিদ ও স্কুলে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্তু জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার জানান, ট্রেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষের অসতর্কতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার শিকার মানুষজনের মধ্যে বেশিরভাগই অজ্ঞাতনামা। তবে পরর্বতী সময়ে কিছু লাশের পরিচয় পাওয়া যায়।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. নুর নবী বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে প্রতিবছরই বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। মূলত যাত্রীদের সচেতনতার অভাবের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। স্টেশনের প্লার্টফমে আগত যাত্রীদের মাইকিং করে নিয়মিত সচেতন করা হয়। যাত্রীরা যেন রেললাইন পারাপারের সময় ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন।