চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘর
সাবেক মন্ত্রী নওফেলের নির্দেশে মুছে দেওয়া হয়েছিল নামফলক

এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪১ এএম

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বন্ধে নানা পরিকল্পনা হয়েছিল। এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ক্ষমতার দাপটে তার নেতৃত্বে মুছে দেওয়া হয়েছিল নামফলক। জাদুঘরটির এখন বেহাল।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে শত বছরের ভবনটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থী ও বিএনপি নেতারা।
জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করার দাবিতে ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছাত্র ফোরাম নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ। ওই কর্মসূচি থেকে কালো রং দিয়ে জাদুঘরের সাইনবোর্ড থেকে নামফলক মুছে দেওয়া হয়। এর আগের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন চট্টগ্রামের তৎকালীন সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের মার্চে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বন্ধ ও কিউরেটর বহিষ্কারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি সংগঠন স্মারকলিপি দেয়। এরপর বন্ধ করে দেওয়া হয় জাদুঘরটি। বিএনপির পক্ষ থেকে খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হলেও খুলে দেওয়া হয়নি। এরপর চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক অনুষ্ঠানে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের দাবিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ওই বছরের ১০ মে জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৯১৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার চট্টগ্রাম নগরীর এসএস খালেদ রোডের পাশের ভবনটি নির্মাণ করে। পরবর্তী সময়ে এটি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম সফরকালে সার্কিট হাউজের ৪ নম্বর কক্ষে ওঠেন। ৩০ মে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি শহিদ হন। ওই বছরের ৩ জুন সার্কিট হাউজকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এর উদ্বোধন হয়। এখানে জিয়াউর রহমানের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত বেশকিছু সামগ্রী এবং কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে আনা স্বাধীনতা ঘোষণার ট্রান্সমিটারটি সংরক্ষিত রয়েছে।
১৬ নভেম্বর জিয়া স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছিলেন, ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বন্ধের সঙ্গে জড়িত কুশীলবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিগত সরকারের সময় যারা শহিদ জিয়ার নাম মুছে দিয়েছিল এবং এটি বন্ধের জন্য কাজ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের বাজেট রয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এ টাকা দিয়ে জাদুঘরের দায়িত্বে থাকা প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ও পেনশন পরিশোধের পর চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। গত ডিসেম্বরে জাতীয় জাদুঘর থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি টিম জাদুঘর পরিদর্শন করে গেছে। এরপর জাদুঘরের উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বাজেট পাশ হলে কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন তিন শতাধিক দর্শনার্থী জাদুঘরটি পরিদর্শন করেন। তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা করে প্রবেশ ফি আদায় করা হয়। গত বছর এই খাত থেকে প্রায় ৬৭ হাজার টাকা পেয়েছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। তবে ৫ আগস্টের পর দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
শনিবার সন্তানদের নিয়ে জাদুঘরে যান চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নুরজাহান বেগম। তিনি বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের জন্য এই জাদুঘরটি অন্যতম একটি স্থান। এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের উপকিপার (রুটিন দায়িত্ব) অর্পিতা দাশ গুপ্ত কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।