Logo
Logo
×

সারাদেশ

টুঙ্গিপাড়ায় রাস্তা নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ, দুদকের মামলা

Icon

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫১ পিএম

টুঙ্গিপাড়ায় রাস্তা নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ, দুদকের মামলা

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাকুড়তিয়া ও চর গোপালপুর এলাকায় রাস্তা নির্মাণ না করে টাকা আত্নসাতের অভিযোগে সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ ৩ জনের নামে মামলা করেছে দুদক।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপসহকারী পরিচালক আল-আমিন হোসেন বাদী হয়ে দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয় এ মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম, ডুমরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহম্মেদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কবির তালুকদার।

গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমানের পাঠানো এক প্রেস বিফিংয়ে উল্লেখ করেছেন- দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকার নথি নং ০০.০১.০০০০.১০৯.৩৬. ০০১.২৫ (ই.এন. নম্বর: গোপালগঞ্জ/৭৫, তারিখ: ২৭-০১-২০২৫) এর অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে এনফোর্সমেস্ট অভিযান পরিচালনা করে প্রাপ্ত তথ্য, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যানুসন্ধানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২১নং প্রকল্প চর গোপালপুর ওয়াবদা রাস্তা হতে পাতিলঝাপা অনন্ত বৈদ্যর বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি বৈদ্যবাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দিয়ে করানো হয়েছে বলে দেখানো হয়। 

বিগত ০৩-০৬-২০২৪ তারিখ হতে ১২-০৬-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২১৬০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ম বিল বাবদ মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল তোলা হয়। 

অতঃপর ১৩-০৬-২০২৪ তারিখ হতে ১৭-০৬-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২১৬০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ২য় বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার বিল তোলা হয়। 

১৮-০৬-২০২৪ তারিখের পর আরও ৫দিন ৫৯০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে বিগত ২৪-০৬-২০২৪ তারিখে ৩য় ও চূড়ান্ত বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০/- টাকাসহ সর্বমোট ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা তোলা হয়। কাজ সম্পন্ন করে চূড়ান্ত বিল তোলা হলেও ৫০ লাখ টাকার প্যালাসাইডিং কাজের মধ্যে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকার কাজ না করে উক্ত টাকা ৩০-১০-২০২৪ তারিখে সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে (১-৪৯০১-০০০১-২৬৭১ কোডে) জমা করা হয়।

এছাড়া ২৪-০৬-২০২৪ তারিখে বরাদ্দকৃত সমুদয় ২,৭৪,৫০,০০০/- টাকা তোলা হয়। অত:পর মাস্টার রোলের সঙ্গে সমন্বয় করে বিগত ৩০-১০-২০২৪ তারিখে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ কাজ না করেও বিল তুলে প্রায় ৪ মাস ওই  টাকা সাময়িক আত্মসাৎ করা হয়েছিল বলে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়।

রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩নং প্রকল্প ‘পাকুরতিয়া পান্না শেখ এর বাড়ি হতে ছোট ডুমুরিয়া দেবেন মণ্ডলের বাড়ির কাছে এইচবিবি রোড পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দিয়ে করানো হয়েছে বলে দেখানো হয়। 

বিগত ০৩-০৬-২০২৪ তারিখ হতে ১২-০৬-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২৫০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ম বিল বাবদ ২৩,৬১,০০০/- টাকা ও চূড়ান্ত বিল বাবদ ২৪-০৬-২০২৪ তারিখে ১১,৮০,৫০০/- টাকাসহ মোট ৪৭,২২,০০০/- টাকার বিল তোলা হয়।

রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, শ্রমিক দ্বারা ওই কাজ ২টি করানো হয়েছে বলে দেখিয়ে ভুয়া মাস্টার রোল প্রস্তুত করে নথিতে রেখে বিল দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে পরিবেশের ক্ষতিকারক ড্রেজার দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। 

কাবিটা নীতিমালায় ড্রেজার দিয়ে কাজ করানোর কোনো নিয়ম না থাকার পরও ড্রেজার দিয়ে সম্পন্ন করিয়ে রাস্তায় বালু ফেলা হয়েছে। ফলে রাস্তাটি মানুষের চলাচলের উপযোগী হয়নি। 

গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-খাদ্যশস্য/নগদ টাকা) কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০২১ এর ১নং অনুচ্ছেদে ওই কর্মসূচির উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে- গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিযোজনে সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তার জন গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি; গ্রামীণ দরিদ্র জনগনের আয় বৃদ্ধি ও দেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য আনা, দারিদ্র্যমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি এবং গ্রামীণ এলাকায় শহরের সুবিধা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সামগ্রিকভাবে জীবনমান উন্নয়ন; কিন্তু বাস্তবে উক্ত প্রকল্প দুটিতে বর্ণিত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। 

প্রকল্প দুটি সরেজমিন পরিমাপ গ্রহণ করা হলে দেখা যায়, ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে রাস্তা তৈরি করায় সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী নেই। অর্থাৎ রাস্তায় বালির পরিমাণ বেশি ও মাটির পরিমাণ অত্যাধিক কম। ড্রেজার দিয়ে বালু পরিবহণ করায় দূরে থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার খরচ লাগেনি; কিন্তু উক্ত খাতে বিল বাবদ টাকা তোলা হয়েছে। 

অতিরিক্ত লিড, ম্যানুয়েল কম্পেকশন, লেভেলিং, ড্রেসিং, ক্যাম্বারিং, পার্শ্ব ঢাল ঠিককরণ, শক্ত, কাদা, বালি মাটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বাবদ বিল তুললেও রাস্তার কাজসমূহ করার তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বর্ণিত আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুতপূর্বক দাখিলের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা তুলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম