নানা অপকর্মের হোতা পরিদর্শক মহিদুলকে স্ট্যান্ড রিলিজ

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
-67b60793d551b.jpg)
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নানা অপকর্মের হোতা মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মহিদুল ইসলামকে অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন।
এ স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুলাইয়ের পর কালিয়াকৈর মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম। এরপর নানা অপকর্মে জড়িয়ে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ওই এলাকার ঝুট ব্যবসার হাত বদলের পর ঝুটের দাম কমানোর কথা বলে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন পরিদর্শক মহিদুল।
এ ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হলে গত নভেম্বর মাসে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ও অদৃশ্য খুঁটির জোরে সেই প্রত্যাহার আদেশ ঠেকিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন ওই পরিদর্শক ও তার সিন্ডিকেট দল। পরবর্তীতে তার ওই সব অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ হলে পরিদর্শক মহিদুল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ওই ব্যবসায়ী ও তার স্বজনদের ভয়ভীতিসহ নানা হুমকি দেন। এরপর তার সহযোগী ইউসুফ আলী রানাকে বাদী করে আদালতে একটি সিআর মামলা করান পরিদর্শক মহিদুল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি কালিয়াকৈর থানায় ওই ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও তার শ্বশুর কালিয়াকৈর পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি একে আজাদকে আসামি করে একটি মামলা রেকর্ড করানো হয়।
এছাড়াও ওই পরিদর্শকের নির্দেশে এএসআই হাবিবুর রহমান হাবিব ফোনে যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানচালক সবুজ সরকারকে ফাঁড়িতে যেতে বলেন। পরে তিনি গত ১০ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে ওই ফাঁড়িতে যান। তালাকপ্রাপ্ত ২য় স্ত্রী অভিযোগ দিয়েছে জানিয়ে তার কাছে ২ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। এত টাকা দিতে পারবে না জানালে পুলিশ তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে তার ১ম স্ত্রী সেলিনা ফাঁড়ি পুলিশকে ৫০ হাজার টাকা দেন; কিন্তু দাবিকৃত টাকার কম দেওয়ায় পরিদর্শক মহিদুল, এএসআই হাবিবুরসহ তিন পুলিশ তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ১ম স্ত্রীর সামনে অমানবিক নির্যাতন করে। ওই সময় মারধর থামানোর জন্য আরও ১০ হাজার টাকা পুলিশ দাবি করেন। সবুজ সরকারের স্ত্রী আরও ৫ হাজার টাকা ব্যবস্থা করে দেন। তারপরও শান্ত হননি পরিদর্শক মহিদুল ও তার টিম। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে দুই দিন আটকে রেখে গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীকে কালিয়াকৈর থানায় হস্তান্তর করে।
২য় স্ত্রী ইতি মামলা করতে অস্বীকার করলে ফাঁড়ি পুলিশ রাতেই তার বড় বোন হাফিজা বেগমকে বাদী করে একটি ধর্ষণ মামলা করায়। ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৬ নভেম্বর সবুজকে তালাক দেন তার ২য় স্ত্রী ইতি। তালাকের পর প্রলোভন দেখিয়ে ৭ নভেম্বর এবং ২৬ নভেম্বর একাধিকবার ধর্ষক করে তালাকপ্রাপ্ত সবুজ। গত ১২ ডিসেম্বর সবুজকে গাজীপুর জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
৪৩ দিন জেল খাটার পর ২২ জানুয়ারি আপসনামার মাধ্যমে জামিনে বেরিয়ে আসেন সবুজ। এরপর ফাঁড়ি পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে ওই দিন ভুক্তভোগী সবুজ সরকারের ১ম স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ ও তাদের সমর্থিত লোক দিয়ে বাদী ও তার পরিবারকে নানা ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি দেন।
এছাড়াও ওই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজন। নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নানা অপকর্মের হোতা মৌচাক পুলিশের ইনচার্জকে অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে জানতে ওই পরিদর্শকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ জানান, মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মহিদুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ করার বিষয়টি শুনেছি। তবে কী কারণে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে? সেটা জানা নেই।