লন্ডনে থেকেও বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামি শাহজাহান

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম

যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর সর্বশেষ ২০১১ সালে দেশে এসেছিলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বগাডুবি গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী। কয়েক দিন পর আবার তিনি ফিরে যান লন্ডনে। এরপর আর তিনি দেশে আসেননি।
উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্যের কোভেন্ট্রি বিএনপির সাবেক এই সদস্য সচিব শাহজাহান চৌধুরীর শেষবার মুখ দেখতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই চলে যান তার মা। অথচ ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সিলেটে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে শাহজাহানকে।
মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই দুপুরে বন্দরবাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৭ অক্টোবর দক্ষিণ সুরমার মানিকপুর এলাকার আকবর আলী নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ১০০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে দায়ের করা হয় এ মামলা। তালিকার ৭৬ নম্বর আসামি শাহজাহান চৌধুরী।
মামলায় উল্লিখিত সময় দেশে না থাকলেও ছাত্রদলের সাবেক নেতা শাহজাহান চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে এমন ‘গায়েবি মামলা’ জড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি সহজভাবে দেখতে নারাজ স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
তারা বলছেন, সুপরিকল্পিতভাবে প্রবাসী শাহজাহানকে আসামি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাকে দ্রুত এ মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার পাশাপাশি এই কাজে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করারও দাবি করেন। তা না হলে যে কোনো সময় দলের অন্য নেতাকর্মীও এমন সংকটে পড়তে পারেন।
জানা যায়, ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন শাহজাহান চৌধুরী। ২০১১ সালের ১ মার্চ দেশে এসে ২৭ মার্চ ফিরে যান যুক্তরাজ্যে। এরপর গত ১৩ বছরের মধ্যে একবারও দেশে আসেননি তিনি। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তার মা ও দুই বোনের মৃত্যু হয়। এর কোনোবারই ফিরতে পারেননি শাহজাহান। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মামলার বাদী আকবর আলী ৭৬ নম্বর আসামি শাহজাহান সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো কিছুই বলতে পারেননি। তিনি এখন খুব অসুস্থ বলে কল কেটে দেন। অন্যদিকে সেই সময় তিনি যে দেশে ছিলেন- তা পুলিশ বা মামলার বাদী নিশ্চিত করতে পারেননি।
এমনকি মামলার বাদী আকবর আলী শাহজাহানের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেননি। সেক্ষেত্রে কিভাবে নাম উল্লেখ করে ইনি শাহজাহানকে মামলার আসামি করেছেন সেই প্রশ্নের কোনো উত্তরও দেননি।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক এ ব্যাপারে জানান, সরকার পতনের পর অনেক মামলা হয়েছে। প্রবাসে কেউ থাকাবস্থায় যদি মামলায় আসামি হন; তদন্তে তেমনটা পাওয়া গেলে চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত শাহজাহান চৌধুরী আক্ষেপের সুরে বলেন, ছাত্র রাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি, ভোগদখল, চাঁদাবাজিতে ছিলেন না কখনো। জীবিকার তাগিদে যুক্তরাজ্যে চলে যান। ২০১১ সালে শেষবার দেশে যান। এরপর আর যাওয়া হয়নি। নিজের মা-বোনের মুখও শেষ দেখা হয়নি। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জানতে পারেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক জীবনে একজন পুরোপুরি ছাত্রনেতাই ছিলাম। সেই সঙ্গে ফুটবলে জাতীয় পর্যায়ের একজন উদীয়মান খেলোয়াড়ও। বিগত ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সঙ্গে আঁতাত করা স্থানীয় কিছু সুবিধাবাদী নেতার প্রতিহিংসার শিকার হই। যে কারণে রাজনীতির পাশ কাটাতেই সব ছেড়ে যুক্তরাজ্য চলে আসি। সেখানেও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ভুতুড়ে মামলার হয়রানি।