
যোগদানের সাড়ে ৬ মাস পর হঠাৎ প্রত্যাহার হলেন যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ। সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (প্রশাসন) কাজী ফজলুল করিমের স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে কী কারণে হঠাৎ এসপিকে প্রত্যাহার করা হলো, সেটি পরিষ্কার করা হয়নি। তাকে তাৎক্ষনিক প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রোববার মনিরামপুর থানায় গ্রেফতার আসামিদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট হামলা, ভাঙচুর, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা। এছাড়াও জেলার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন যশোরের মানুষ।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট যশোরের পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিয়াউদ্দীন আহমেদ। তার মেয়াদে যশোর জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় জনজীবনে আতঙ্ক নেমে এসেছে। একইসঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে থাকে।
সর্বশেষ রোববার মাদকসহ ৪ আসামি ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে মনিরামপুর থানার ওসিসহ কয়েকজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) অপসারণ দাবি করে মনিরামপুর থানার ফটকে বিক্ষোভ করে উপজেলা বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
থানা ঘেরাওকালে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আসামিদের ধরে আনছেন ঠিকই। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আদালতে সোপর্দ না করে থানা থেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন। দাগি অপরাধী হওয়ার পরও তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া ফ্যাসিস্টদের সহযোগিতার নামান্তর। এসবের নেপথ্যে পুলিশের অর্থ বাণিজ্য জড়িত বলে তারা দাবি করেন।
এদিকে বিক্ষোভের সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা থানার ফটকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য শেখর দত্ত মারপিট করাসহ থানার ফটকের একটি কক্ষের গ্লাস ভাঙচুর করেছে দাবি করে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে পুলিশ। এ ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠায় পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এছাড়াও গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত যশোরে অর্ধশতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পরে আসামি বা হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারলেও হত্যা প্রতিরোধ করতে পারেনি।
এছাড়া গেল সাড়ে ছয় মাসে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যশোরে ১৫টি ডাকাতি, অন্তত ৩০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একটিরও কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি লুণ্ঠিত টাকা ও মালপত্র। এতে দিন দিন আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া প্রতিনিয়ত জেলা শহরে চুরি ছিনতাই ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যার পরে অনেক সচেতন বাসিন্দা বাইরে বের হতে অনেকেই আতংকিত বোধ করেন। সব মিলিয়ে যশোরে আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।