হাসিনার ভারতপ্রীতিতে তিস্তাপারের কোটি মানুষ অধিকার বঞ্চিত

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১২ পিএম

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে জনতার সমাবেশের প্রথম দিনে কুড়িগ্রামের উলিপুরে হাজার হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদীর উপকন্ঠে পাকার মাথায় সকাল থেকে সমাবেশে তিস্তাপারের মানুষের মহামিলন মেলায় পরিণত হয়।
জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বজরা, গুনাইগাছ, দলদলিয়া ও থেতরাই এই চারটি ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্ঠিত। এই চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিবছর খরায়-বন্যায় ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার সময় ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরদিকে খরার সময় তিস্তার বুকচিরে জেগে উঠে ধু-ধু বালুচর। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পেলে খরায়-বন্যায় এ এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
এ কারণে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ সমাবেশে মিলিত হয়ে ন্যায্য দাবীর পক্ষে আওয়াজ তোলেন ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই।’ একই দাবিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় ১১ স্থানে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন এই এলাকার দলমত নির্বিশেষে সব মানুষ।
কর্মসূচিকে ঘিরে তিস্তাপারের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে জাগরণ। চলছে এক মহোৎসব। লাগাতার কর্মসূচি সফল করতে আয়োজক কমিটি ২৫ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া সারারাত সমাবেশ স্থলে হাজার মানুষ অবস্থানের জন্য বিশাল প্যান্ডেল করা হয়েছে। তারা সারা রাত চরের মধ্যে খর (পোয়াল) বিছিয়ে রাতযাপন করবেন। মঙ্গলবার দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষ করে তারা বাড়ি ফিরবেন। আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবারের সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এদিকে ভার্চুয়ালি জনতার সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু, আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আহসান হাবীব দুলু। স্থানীয়ভাবে বক্তব্য রাখেন- তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, উলিপুর উপজেলা সমন্বয়ক হায়দার আলী মিঞা, চিলমারী উপজেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি আব্দুল বারী, বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ সরকার, তাহমিনা বেগম রুবী, রশিদা বেগম লতা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে সঞ্চালনা করেন নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য এরশাদুল হাবীব নয়ন ও আলমগীর হোসেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ভারত বন্যার সময় পানি ছেড়ে দিয়ে তিস্তাপারের মানুষকে ডুবিয়ে দেয়। খরার সময় পানি বন্ধ করে দিয়ে ধু-ধু বালুচর সৃষ্টি করে। এই এলাকার মানুষের কষ্টের বোঝা বাড়িয়ে দেয়। যখন পানির দরকার তখন দেয় না, যখন দরকার নেই তখন ছেড়ে দেয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষার কারণে তিস্তাপারের কোটি মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি। এ এলাকার মানুষের স্বার্থে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দাবি জানানো হয়।