ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে বাইক দুর্ঘটনা, ৬ মাসে নিহত ২০

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে দুর্ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। গত ৬ মাসে ২০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। মহাসড়কের চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে মীরসরাই উপজেলার বারয়াহাট পর্যন্ত অংশে নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তার ওপর কমেছে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা। বেড়েছে সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ত্রিচক্র যানের দৌরাত্ম্য। মহাসড়কে চলাচলে এমন ঝুঁকির কারণে জনজীবনে উদ্বেগ বাড়ছে। এ বিষয়ে আইনের যথার্থ বাস্তবায়ন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সচেতন সমাজ।
গত বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলার নিজামপুর এলাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে উল্টে পড়া ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে আক্তার হোসেন (৪৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। তিনি ছিলেন একজন তরুণ উদীয়মান ব্যবসায়ী। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মহাসড়কের শীতলপুর চৌধুরীঘাটা এলাকায় এক মোটরসাইকেলআরোহী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কেডিএস গ্রুপের একটি পণ্যবাহী গাড়ির নিচে ঢুকে পড়ে। এতে চাকার নিচে চাপা পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় চানমিয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তির। তিনি ঢাকার দোহার থানার রাধানগর সিকদার বাড়ির মৃত দলিল উদ্দিনের ছেলে। সীতাকুণ্ডের মাদামবিবিরহাট নেভি রোডে অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।
একই দিন অপর এক দুর্ঘটনায় ঘটেছে আরও দুজনের মৃত্যুর ঘটনা। তার আগে গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই সদর সংলগ্ন এলাকায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ৩ বন্ধু প্রাণ হারান। নিহতরা হলেন- মীরসরাইয়ের মায়ানী বড়ুয়াপাড়া এলাকার রুবেল বড়ুয়া (৪০), নিপু বড়ুয়া (৪৩) ও সানি বড়ুয়া (৩৭)।
গত ৯ জানুয়ারি মহাসড়কে ট্রাকচাপায় প্রিয় শখের বাইকে প্রাণ গেল মীরসরাইয়ের কলেজছাত্র নাঈমুলের। নিহত নঈমুল ইসলাম (২৪) মীরসরাই উপজেলার নিজামপুর কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এভাবে গত ৬ মাসে ২০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে।
মহাসড়কের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী এক ফায়ারসার্ভিস কর্মী জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অনেক সময় বেপরোয়া গতির কিছু স্থানীয় ও বহিরাগত বাইকারকে দেখা যায় অত্যন্ত বেপরোয়া গতিতে চলাচল করতে। অথচ এখানকার হাটবাজার এলাকাসহ বিভিন্ন উপসড়কগুলো থেকে অনেক সময় যে কোনো গাড়ির মুখোমুখি বা বিভিন্ন গতির বাস-ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। বেপরোয়া এসব বাইকারদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ও অভিযোগ রয়েছে।
কুমিরা হাইওয়ের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতকাল বেড়ানোর মৌসুম। এ সময়ে কুয়াশাসহ মহাসড়কের অনেক স্থানে বিভিন্ন সিগন্যাল দুর্বল থাকে। আবার কিছু বেপরোয়া বাইকারের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে একটু ব্যত্যয়ও ঘটছে। তবে এখন থেকে নিয়মনীতি পালনে আইন প্রয়োগ করার নির্দেশনা রয়েছে। তাই আমরাও কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছি।
তবে এ বিষয়ে সবার সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা প্রায়ই বাইকারদের হেলমেট থাকা, গতি সীমিত রাখার বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এরপরও নিজেরা সচেতন না হলে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি রোধ সম্ভব নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপও অনেকগুণ বেড়েছে। সেই নীরিখে এ মহাসড়কের লেন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।