মাদারীপুরের শিবচরে মাত্র সাড়ে ৪শ টাকার জন্য ভ্যানচালক মিজানকে গলা কেটে হত্যা করেছে স্বাধীন। হত্যায় জড়িত ৩ জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে মিজান হত্যার চাঞ্চল্যকর এ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিন আসামি।

সোমবার রাতে প্রেস কনফারেন্সে সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজমির হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, জেলার শিবচর পৌরসভার কেরানীর বাট এলাকার নবীনূর বেপারীর ছেলে আরিয়ান আহমেদ স্বাধীনের কাছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মালামাল পরিবহণের ভাড়া ৪৫০ টাকা পেতেন উমেদপুর ইউনিয়নের চরকাচিকাটা গ্রামের লাভলু গাজীর ছেলে ভ্যানচালক মিজানুর রহমান গাজী। পাওনা ৪৫০ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রায়ই মিজানুরের সঙ্গে স্বাধীনের কথা কাটাকাটি হতো। এতে স্বাধীন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ভ্যানচালক মিজানুরের ওপর। তাই পরিকল্পনা করে মিজানুরকে শিক্ষা দেওয়ার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন তার বন্ধু দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামের হুমায়ুন শিকদারের ছেলে হান্নানকে দিয়ে কেরানীর বাট বেইলি ব্রিজসংলগ্ন মিজানুরের ভাড়া বাসা থেকে মিজানুরকে পাঁচ্চর যাওয়ার কথা বলে ৫শ টাকায় ভাড়া করে। হান্নান ভ্যানসহ মিজানুরকে কৌশলে কাদিরপুর ইউনিয়নের পবন মোড়লের চর কান্দি গ্রামের একটি ভুট্টাখেতের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন স্বাধীন ও তার বন্ধু কেরানীর বাট গ্রামের মামুন মিনার ছেলে আল আমিন।

মিজানুরকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমেই স্বাধীন ধারালো ছুরি দিয়ে মিজানুরের গলায় আঘাত করে। আল আমিন ও হান্নান ধারালো ছুরি দিয়ে শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাত করে। এতেই মৃত্যু হয় ভ্যানচালক মিজানুরের। পরে খুনি ৩ জন মিজানুরের ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যান। ৭ ফেব্রুয়ারি ভুট্টাখেতে মিজানুরের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা।

পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ধারালো একটি ছুরি, নেশাগ্রহণের সরঞ্জাম ও আসামিদের পরিহিত একটি লাল রংয়ের জ্যাকেট উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে আরিয়ান আহমেদ স্বাধীন ও আল আমিনের নামসহ অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামিকে করে শিবচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ হত্যারহস্য উন্মোচনে শিবচর থানার ওসি মো. রতন শেখের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। পুলিশ প্রথমেই আরিয়ান আহমেদ স্বাধীন ও আল আমিনকে হেফাজতে নেয়। পরে শিবচর থেকে কাঠালবাড়ি পর্যন্ত এলাকার অন্তত ৫০টি স্থানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায় হত্যার স্থান থেকে উদ্ধারকৃত লাল রংয়ের জ্যাকেট পরিহিত হান্নান ভ্যানসহ মিজানুরকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্য আরও সূত্র থেকে পুলিশ এ হত্যার সঙ্গে আরিয়ান আহমেদ স্বাধীন ও আল আমিনের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ হান্নানকে রোববার রাতে গ্রেফতার করে সোমবার বিকালে মাদারীপুর জেলহাজতে প্রেরণ করে। গ্রেফতার আসামিরা আদালত ও পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।