দুই মেম্বারের জন্য ২২ লাখ টাকার কালভার্ট!

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৪ পিএম

জনমানবহীন এলাকাটিতে শুধু চাষাবাদ করা হয়। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পার করে যেতে হয় দুই ইউপি সদস্যের (মেম্বার) খামার বাড়িতে। সেই খামার বাড়ির জন্য ফসলি জমির মাঝেই করা হয়েছে কালভার্ট। তবে কালভার্টের দুপাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ঘটনাটি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের।
ওই গ্রামের মরা পাইন্দং ছড়ার ওপর ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে কালভার্টটি নির্মাণ
করা হয়েছে। ফসলি জমির মাঝখানে নির্মিত এ কালভার্ট কাজে আসছে না স্থানীয়দের। তাদের দাবি,
খামার বাড়িতে যাতায়াতে সুবিধার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে কালভার্টটি নির্মাণ করেছে
দুই মেম্বার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কালভার্টটি নির্মাণ করে। তবে এর দুপাশে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। কালভার্টটি
নির্মাণকে অর্থ অপচয় বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কি কারণে কালভার্টটি
করা হলো তা আমরা জানি না। দুপাশে মাটি ভরাট করে রাস্তা করা হলেও চলাচল করা যেত। সেখানে
কালবার্ট নির্মাণের প্রয়োজনই ছিল না। দুই মেম্বারের খামার বাড়িতে যাতায়াতের জন্য কি
এত টাকায় কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে? এভাবে সরকারি অর্থ অপচয়ের কী প্রয়োজন ছিল?’
গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. লোকমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, দুটি পরিবারের জন্য কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ক্ষমতা পাওয়া গেলে সবই যেন সম্ভব, এ সেতুই তার প্রমাণ।’
ইউনুস মিয়া নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘দুই মেম্বার ক্ষমতার অপব্যবহার
আর চেয়ারম্যানের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেই করেছে কালভার্টটি করেছে। খামারে যাতায়াতের জন্য
এত টাকা ব্যয়ে কালভার্ট কখনোই প্রয়োজন হয় না। ক্ষমতা আছে, এ জন্যই করা সম্ভব হয়েছে।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেখা দরকার।’
উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ মাস্টার
বলেন, ‘কেউ যদি ব্যক্তি স্বার্থে কোনো কালভার্ট করে এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া
কিছু নয়।’
কালভার্টটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ আলম এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক
মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘কালভার্টের দুপাশে মাটি দেওয়া হয়েছে। তবে মাটি ভরাট করে রাস্তা
নির্মাণের বরাদ্দ নেই। এটির প্রয়োজনীয়তা ছিলো কি না তা বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে পাইন্দং ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.
এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমি কোনো তদবির করি নাই। ওই খানে আমার বাগান আছে এটা ঠিক।
তবে রাস্তাটি আশ্রয়ণের বিকল্প সড়ক।’
এ বিষয়ে জানতে ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের
ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
পাইন্দং ইউনিয়রে চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, ‘দুই মেম্বার
নয়, কৃষক যাতে মাঠ থেকে ফসল নিয়ে সহজে যাতায়াত করতে পারে সে জন্যই এটি করা। এছাড়া পাইন্দং
আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের এটি বিকল্প সড়ক। কালভার্টের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণে অর্থ
বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আগামী অর্থ বছরেই কাজ শুরু হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী দীপেন চাকমা বলেন,
‘খাল ব্লক হওয়ায় কালভার্ট করা হয়, যাতে পানি প্রবাহ কন্টিনিউ হয়। কৃষকদের স্বার্থে
আমরা খালটি খনন করব। স্থানীয় চেয়ারম্যান রাস্তা করে নিবে বলছে।’
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,
‘প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে জবাব দিতে পারবে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। কীভাবে এমন প্রকল্প
হাতে নিয়েছেন, সেটি আমার বোধগম্য নয়। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’