স্বামী হত্যায় স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০১ পিএম

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পরকীয়া প্রেমের জেরে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী হাফিজা খাতুন ও তার পরকীয়া প্রেমিক আব্দুল্লাল আল মামুনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকালে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক আলী মুনসুর এ রায় ঘোষণা দেন।
২০১১ সালের ২৮ জুন মুক্তাগাছা উপজেলার ভাবকী এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিনকে হত্যা করেন স্ত্রী হাফিজা ও হাফিজার পরকীয়া প্রেমিক আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিয়ের পর স্ত্রীকে দেশে রেখে হেলাল উদ্দিন দুবাই পাড়ি জমান। স্বামী দুবাই থাকাকালে হাফিজা পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে হেলাল উদ্দিন দেশে ফিরে হাফিজার কাছে প্রবাস থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। একপর্যায়ে খুন হন হেলাল উদ্দিন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর আগে হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার নন্দিবাড়ি গ্রামের হাফিজার। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে স্থানীয়দের সালিশের মাধ্যমে আবারও তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর তারা হাফিজার বাবার বাড়ি নন্দিবাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। এরপর তাদের দুটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে হেলাল দুবাই চলে যান। হেলাল দুবাই চলে যাওয়ার পর হাফিজা বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো টাকা নিয়ে বন্ধু-বান্ধবসহ বেহিসাবিভাবে খরচ করতে শুরু করেন। এতে তার জীবনযাত্রা বদলে যায়।
হাফিজার পরিবার তাকে বাধা দিলে একপর্যায়ে তিনি ডেসটিনি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। একই অফিসে চাকরির সুবাদে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন হাফিজা।
বিদেশ থেকে ফিরে হাফিজার কাছে পাঠানো টাকার হিসাব চাওয়াতে তাদের দাম্পত্য কলহ চরম আকার ধারণ করে। ওই সময় নন্দিবাড়ি গ্রামে বসত ঘর থেকে হেলাল উদ্দিনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এতে হেলাল উদ্দিনের বোন সাফিয়া আক্তারের সন্দেহ হয় তার ভাইয়ের স্ত্রী হাফিজা এবং কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ আল মামুন মিলে তার ভাইয়ের টাকাপয়সা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হেলালকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করে। এ ঘটনায় হাফিজা ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আসামি করে মুক্তাগাছা থানায় মামলা করেন হেলাল উদ্দিনের বোন সাফিয়া আক্তার।
মামলাটির দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তাগাছা ভাবকী এলাকার ইয়াদ আলীর মেয়ে হাফিজা খাতুন এবং ময়মনসিংহের চর ঘাঘরা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং উভয়কে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। হাফিজা খাতুন এ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে আব্দুল্লাহ আল মামুন পলাতক রয়েছেন।