প্রবাসে থেকেও নাশকতা মামলার আসামি নেত্রকোনার আক্কাছ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম

মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত আক্কাছ মিয়া
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ঘটনার সময় দেশে অবস্থান না করেও নাশকতার মামলায় আসামি হয়ে জেল খাটছেন এক ব্যক্তি। অভিযুক্ত আক্কাছ মিয়া উপজেলার রামজীবনপুর গ্রামের মাহমুদ হোসেনের ছেলে।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে দুবাই গিয়ে ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি দেশে আসেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে ২০১৬ সালের নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
আক্কাছ মিয়ার পরিবারের দাবি, মসজিদের জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেল খাটানো হচ্ছে। অথচ ঘটনার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না।
ভুক্তভোগীর স্বজনদের বক্তব্য ও প্রবাসে থাকার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মামলায় তাকে দলপা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করেছে পুলিশ। এদিকে আক্কাছ মিয়া (৬২) দলীয় নেতা বা কর্মী নন বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজিম উদ্দিন।
পুলিশ জানায়, গত ২১ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার বাদে আঠারোবাড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে জামাল উদ্দিনের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ মে জেলার কেন্দুয়া উপজেলা সদরের হাইস্কুল সড়কের জামাল উদ্দিনের বাসা ও উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বাদীর বাসায়ও হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ করা হয়।
কেন্দুয়া পৌর সভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল হক ভুঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম জুয়েল, তাজুল ইসলাম আব্দুল কাদেরসহ ৬০ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় আক্কাছ মিয়াকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
আক্কাছ মিয়ার মেয়ে সোমা আক্তার, জামাতা শামীম আহেমেদ ও ছেলে লিংকন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বাবা ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দুবাই যান। পরে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে সেখানে থেকেই পাসপোর্ট রিনিউ করেন। প্রবাস থেকে তিনি ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশে আসেন। মসজিদের জায়গা নিয়ে বিরোধ থাকায় এলাকার একটি পক্ষ তাকে আওয়ামী লীগ বানিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা সেনাবাহিনীর দারস্থ হই। এই ক্ষোভে আমাদের বাবাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে জেল খাটানো হচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজিম উদ্দিন ফকির যুগান্তরকে বলেন, আক্কাছ মিয়া ১০ বছর ধরে বিদেশ থাকেন। তিনি আওয়ামী লীগ বা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। বছর দেড়েক আগে তিনি দেশে এসেছেন। তাকেও ২০১৬ সালের নাশকতা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে শুনে অবাক হয়েছি।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, আক্কাছ মিয়া কোনো দিন রাজনীতি করেন নাই। তিনি বিদেশে থাকেন। যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই ঘটনা ২০১৬ সালের। তখন তিনি দুবাই ছিলেন। বিদেশ থেকে কিভাবে ভাঙচুর করলেন আমরা জানি না। মামলাগুলো যে মিথ্যা, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দুযা থানার ওসি মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আক্কাছ মিয়া প্রবাসে ছিলেন এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। বিষয়টি যাচাই করে পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।