Logo
Logo
×

সারাদেশ

৫৩ কোটি টাকার ভবন নির্মাণে অনিয়ম, বছর না যেতেই ফাটল

Icon

মো. শাহ জামাল, (কুতুবদিয়া) কক্সবাজার

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম

৫৩ কোটি টাকার ভবন নির্মাণে অনিয়ম, বছর না যেতেই ফাটল

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৫৩ কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে ১১টি ভবন। ইতোমধ্যে ৯টি ভবনের কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে বুঝিয়ে দেওয়ার এক বছর না যেতেই ভবনগুলোতে ধরছে ফাটল। ওঠে গেছে পলেস্তারা। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দিয়েও হচ্ছে না কাজ।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে এমনটি হয়েছে। ভবন সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হলেও তারা তা করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৫ সালে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আশ্রয়ণ প্রকল্প কাম স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় ১১টি বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের টেন্ডার হয়। ভবনগুলো নির্মাণের দায়িত্ব পায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি।

২০১৭ সালে শুরু হয়ে ১১টি ভবন নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ করার কথা ছিল। তবে সময় মতো কাজ সবগুলো ভবনের শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৯টি ভবনের কাজ শেষ করে সেগুলো বুঝিয়েও দিয়েছে তারা। আর দুটি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। শতভাগ শেষ হওয়া ভবনগুলোতে ইতোমধ্যে ধরছে ফাটল, উঠে গেছে পলেস্তারা।

প্রকল্পের আওতায় ছিল বাইঙ্গাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা নিচের একটি পুকুর থেকে বালতি ভরে পানি তুলছে। তখন কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলেন, মোটর ও টিউবওয়েল নষ্ট। তাই নিচ থেকে পানি তুলে টয়লেটে ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া ওই স্কুলে দেওয়া সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তারা।

প্রকল্পের আওতায় থাকা জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের নিচে গরুর ঘাস রাখা হয়েছে। মেঝের ঢালাই উঠে গেছে। ছাত্র ছাত্রীদের পুরাতন একটি ভবনে পাঠদান করা হচ্ছে। আর নির্মাণাধীন তাবেলারচর রেড ক্রিসেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফাটল দেখা যায়। এ ছাড়া প্রতিটি ভবনের চারপাশে দেওয়া গাইড ওয়াল ধ্বসে পড়েছে।

প্রকল্পের আওতায় শেষ হওয়া বাইঙ্গাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মফিজুল আলম অভিযোগে করে বলেন, ‘স্কুলের ভবন নির্মাণের সময় সাইনবোর্ড টাঙানোর কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা করেনি। নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছে। টিউবওয়েলে ব্যবহৃত সব যন্ত্রাংশ নিম্নমানের। এক বছর শেষ না হতেই সব টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। ভবনের চারপাশে ভরাট করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বাল্ব ও বৈদ্যুতিক পাখা চালু করলে সোলার বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় মো. ওসমান গণি কুতুবী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘নির্মাণ কাজ ভালো হয়নি। এ কারণে পলেস্তারা খুব কম সময়ে খসে পড়েছে। এই ভবন বেশিদিন টিকবে না।’

কুতুবদিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুসলিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ভবন নির্মাণের সিডিউল গোপন রেখে তাদের ইচ্ছেমতো ভবনের কাজ সমাপ্ত করেছে। সমাপ্তের এক বছরের মাথায় কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও তা আমলে নেয়নি। এছাড়া অধিকাংশ ভবনের টিউবওয়েলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজের অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের কক্সবাজার জেলা ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব থাকে। আর নির্মাণ হওয়া ভবনগুলো সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের প্রতিনিধি তদারকি করার পর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন অভিযোগ দিতেই পারে। এগুলো আমাদের দেখার বিষয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভবন নির্মাণে কোন অনিয়ম হয়নি, টুকটাক ভুল হতেই পারে।’

এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে কুতুবদিয়া উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী আব্বাস উদ্দিনকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম