Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘আমাদের বাঁচান, আমরা বাঁচতে চাই’

Icon

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম

‘আমাদের বাঁচান, আমরা বাঁচতে চাই’

ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন থেকে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের উপকরণ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে রোগী ও তাদের স্বজনরা ডায়ালাইসিসের জন্য বাড়তি খরচ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেও কোনো সুরাহা মেলেনি রোগীদের। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বরাদ্দ করা ডায়ালাইসিস উপকরণ বছর শেষ না হতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। 

এদিকে বিরল উপজেলার কিডনি রোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আর টাকা জোগাড় করতে পারছি না। আমাদের জীবন বাঁচাতে অন্তত ডায়ালাইসিসের উপকরণ সরবরাহ করুন। আমরা বাঁচতে চাই’। 

এই ভুক্তভোগী বলেন, তিন বছর আগে তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয় তাকে। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম অবস্থায় শুধু মেশিন ভাড়া ৪শ টাকা দিয়েই ডায়ালাইসিস করাতে পারতেন তিনি। বেশ কিছুদিন থেকে হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিসের উপকরণ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এজন্য প্রতিবার ডায়ালাইসিসের জন্য পানি, হেপারিন, সিরিঞ্জ, গ্লোবস, ব্লাডসেটসহ অন্যান্য উপকরণ কিনতে খরচ হচ্ছে অন্তত ৩ হাজার ২শ টাকা। এরপর হাসপাতাল স্টাফদের বখশিস বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি ওষুধ কিনে খেতে হয় নিয়মিত।

রফিকুল ইসলামের ছেলে মিলন হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিস উপকরণ সরবরাহ করলে বাড়তি ৩২শ টাকা লাগতো না। মাত্র ৪শ টাকাতেই প্রতিবার ডায়ালাইসিস করা যেত। 

মিলন হোসেন জানান, তারা বাবা দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন তিনি নিজেও কর্মহীন। চিকিৎসার খরচ জোগাতে তিন বছরে তিন বিঘা জমির সবটুকুই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সব শেষ। এ অবস্থায় তার বাবাকে বাঁচাবেন কী করে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। 

একই কথা জানান অন্য কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনরাও। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। এখানে আগে মাত্র ৪০০ টাকা দিয়েই ডায়ালাইসিসের সুবিধা পেতো রোগীরা; কিন্তু এখন ডায়ালাইজার, ব্লাড লাইন, স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধপত্র সরবরাহ বন্ধ। এতে বাইরে থেকে একজনের প্রতিবার ডায়ালাইসিস করাতে ৩ হাজার ২শ টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। এরপরও জীবন বাঁচাতে এ পরিমাণ অর্থ খরচ করতে গিয়ে স্বর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন অধিকাংশ রোগী ও তাদের পরিবার। 

এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ডায়ালাইসিস করতে আসা কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনরা। 

অবস্থান কর্মসূচিতে একজন রোগী জানান, ৮ মাস ধরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডায়ালাসিসের কোনো উপকরণ সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে তাদের একবার ডায়ালাইসিস করতে ডাক্তার ও ওষুধ খরচ বাদ দিয়ে ৩২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস ও চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাধ্য হয়ে ভিটামাটি, গরু ছাগল বিক্রি করতে হয়েছে। 

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান জানান, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে কিডনি রোগীরা আসেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে। তাই বরাদ্দ উপকরণ সময়ের আগেই শেষ হয়ে যায়। তাবে কবে নাগাদ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। 

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৩২টি ডায়ালাইসিস বেড রয়েছে। প্রতিদিন চার শিফটে ডায়ালাইসিস করেন শতাধিক রোগী।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম