-67a38e582c115.jpg)
বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় পোশাক বিক্রির একটি শো-রুম উদ্বোধন উপলক্ষে ৫০ টাকায় টি-শার্ট ও ১৫০ টাকায় শার্ট বিক্রির ঘোষণা নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা ওই এলাকার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়।
সস্তায় কাঙ্ক্ষিত পোশাক দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিক্ষুব্ধ ক্রেতারা প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালিয়ে ৩০ লক্ষাধিক টাকার পণ্য লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাসদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিশৃঙ্খলাকারী ক্রেতাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এ সময় তারা লাঠিপেটা ও কিল-ঘুসির শিকার হয়েছেন।
দোকানের কর্মচারীরাও সস্তায় পোশাক নিতে আসা ক্রেতাদের মারপিট করেছেন। অনেকে তাদের মূল্যবান জুতা, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ খুইয়েছেন। প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে সাত দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডনিস বাবু জানান, ‘লাইফ ওকে’ নামের ওই পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন, সস্তায় পোশাক বিক্রির অফার ও অন্যান্য কোনো বিষয় সমিতিকে অবহিত করেনি। সমিতির নেতারা অবহিত থাকলে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটত না।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের ‘লাইফ ওকে’ নামে একটি পোশাক বিক্রি প্রতিষ্ঠান বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় রাখি ম্যানশনে প্রথমবারের মতো আউটলেট খুলতে যাচ্ছে। তারা ব্যবসার স্বার্থে ও উদ্বোধনী চমক হিসেবে ফেসবুক পেজে পোস্ট দেয় যে, এখানে মাত্র ৫০ টাকায় টি-শার্ট, ১৫০ টাকায় শার্ট ও ২৫০ টাকায় এক্সপোর্ট ইউএস পোলো সুয়েটার পাওয়া যাবে। এমন ঘোষণায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিপুলসংখ্যক বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় ‘লাইফ ওকে’ শো-রুমের সামনে ভিড় করেন।
জনসমাগমের কারণে পুরো জলেশ্বরীতলা এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড় থেকে কালীবাড়ি মোড় পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ও নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকার দুই শতাধিক ব্যবসায়ী তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেন। এহেন পরিস্থিতিতে সেনা বাহিনীর সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে আসেন।
আগত জনগণকে চলে যেতে অনুরোধ করলে তারা অগ্রাহ্য ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের লাঠিচার্জ ও কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। এ সময় সস্তায় পোশাক কিনতে আসা বিভিন্ন বয়সের জনগণ ভুয়া ভুয়া স্লোগান ও মারমুখী আচরণ করেন।
এদিকে দুই দফা লাঠি চার্জের পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে ‘লাইফ ওকে’ শো-রুম খুলে দেওয়া হয়। এরপর ক্রেতারা সেখানে হুমকি খেয়ে পড়েন। পরিস্থিতি আবারো নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। এ সময় শো-রুমের স্টাফরা ক্ষিপ্ত হয়ে ক্রেতাদের মারপিট করেন। এক ছাত্র আহত হওয়ার কথা প্রচার হলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সেখানে এসে হট্টগোল করেন।
এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে শো-রুমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া ভিতরে থাকা ক্রেতাদের বের করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামী সাত দিনের জন্য শো-রুমটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডনিস বাবু জানান, ‘লাইফ ওকে’ নামের ওই পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের অবহিত না করেই শো-রুম উদ্বোধন করার চেষ্টা করে। সস্তায় পোশাক বিক্রির ঘোষণা দেওয়ায় বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী-পুরুষ সেখানে হুমকি খেয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে লাঠিচার্জ ও কিল-ঘুসি মারতে হয়েছে। ওই শো-রুমে বিশৃঙ্খলা কারণে এলাকার অন্তত ২০০ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে এসব ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা বিক্রি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়; এলাকায় বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। এছাড়া সস্তায় পোশাক বিক্রির ঘোষণা দেওয়া ‘লাইফ ওকে’ শো-রুমে অন্তত ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শো-রুমের স্টাফদের হাতে এক ছাত্র আহত হওয়ার খবর প্রচার হলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সেখানে এসে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ও প্রশাসন বিষয়টি অবহিত থাকলে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হতো না।