ছাত্রদল নেতার হেনস্তার শিকার তরুণীর আত্মহত্যা
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ পিএম
পটুয়াখালীর বাউফলে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সম্পা রানী ওরফে ইতি দাস (১৯) নামে এক শিক্ষার্থী তার বন্ধুর সঙ্গে হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে এক ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে কয়েক বখাটের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সেই লজ্জায় ক্ষোভে ওই ছাত্রী ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার রাত ৯টার দিকে দাসপাড়া গ্রামে ইতি দাসের ঘর থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
ওই তরুণী দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সমীর দাস ওরফে নিরঞ্জন দাসের মেয়ে। তিনি বরিশাল সরকারি হাতেম আলী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
হেনস্তাকারী ওই ছাত্রদল নেতার নাম হৃদয় রায়হান। বাউফল পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাউফল পৌরসভা শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাকিবুজ্জামান রাকিবের খুবই কাছের লোক হিসেবে পরিচিত।
সাকিবুজ্জামান রাকিবের দাবি, কিছুদিন আগে তাকে (হৃদয়) দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইতির বন্ধু, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঘুরতে বের হয়েছিলেন ইতি। দুপুর ১২টার দিকে তার এক বন্ধুর সঙ্গে উপজেলা সদরের পাবলিক মাঠ-সংলগ্ন পূর্ব পাশে খাবার হোটেলে যান ইতি। তখন হৃদয় রায়হান তাদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করেন।
একপর্যায়ে হৃদয় ওই তরুণীর সঙ্গে থাকা বন্ধুকে ধরে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং সঙ্গে থাকা কয়েক বখাটে তরুণীর বন্ধুকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করে। আর তাতে ওই তরুণী বাঁধা দিলে তার সঙ্গেও ধস্তাধস্তি করে বখাটেরা।
বিষয়টি ওই তরুণীর বন্ধুদের একজন ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে জানালে বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহিন এসে তরুণীর বন্ধুকে মোটরসাইকেলে করে থানায় নিয়ে যায়। ইতিও থানায় চলে যান। বিকাল ৪টার দিকে তাদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাড়িতে পৌঁছে ওই তরুণী ঘরের দোতলায় চলে যান। এরপর পরিবারের কেউ আর তাকে দেখেননি। রাত ৯টার দিকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য তার মা ডাকতে গেলে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার করেন। তখন লোকজন এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
ওই তরুণীর পরিবারের এক স্বজন বলেন, বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে তার সামনেই বন্ধুকে হেনস্তা ও অপদস্থ হতে দেখে তা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত বখাটেরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় চলে বলে তারা বিচার চাইতেও ভয় পাচ্ছেন। তাদের পরিবারের সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
এ বিষয়ে হৃদয় রায়হান বলেন, তিনি হেনস্তা করেননি। তবে তাদের (তরুণী ও বন্ধু) আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাদের পরিবারকে খবর দিয়ে নিয়ে যেতে বলেছি। পরিবার না এসে পুলিশ পাঠালে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং মেয়েটি কান্না করতে করতে বাড়ি চলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ওই তরুণী যাওয়ার সময় ওই বখাটেরা থানার সামনেই অবস্থান করছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য করে ওই তরুণী বলছিলেন- তোরা আমাকে বাঁচতে দিলি না।
প্রত্যক্ষদর্শী দুই ব্যক্তি বলেন, তরুণী ও তার বন্ধু খাবার হোটেলে বসে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন। আপত্তিকরের বিষয়টি ভিত্তিহীন।
বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহিন বলেন, এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন হৃদয়। সোমবার থানায় এক ছেলে এসে বলে তাদের মোটরসাইকেল আটকে রেখেছে। তিনি ঘটনাস্থলে যান। তখন হৃদয় তাকে বলে এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ওখানে যে মেয়ে সংক্রান্ত বিষয় ছিল তা তিনি জানতেন না। তিনি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছিলেন; কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে রাজি হননি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।