Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাঙামাটির মিনি চিড়িয়াখানা থেকে ১৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার বন বিভাগের

Icon

সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম

রাঙামাটির মিনি চিড়িয়াখানা থেকে ১৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার বন বিভাগের

ছবি: সংগৃহীত

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শহরের সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত মিনি চিড়িয়াখানা থেকে ১৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে কক্সবাজারের চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে স্থানান্তর করেছে বন বিভাগ। সোমবার দুপুরে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের একটি বিশেষ দল রাঙামাটির মিনি চিড়িয়াখানায় গিয়ে অবহেলায়-অযত্নে থাকা এসব বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে ডুলাহাজারা পার্কে নিয়ে যায়। তবে এর আগে জেলা পরিষদ বন বিভাগের ওই ইউনিটকে বন্যপ্রাণীগুলো হন্তান্তরের প্রস্তাবনা দেয় বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী বিশেষ দলের সদস্যরা।

জানা গেছে, ২০০২ সালে রাঙামাটি শহরের সুখী নীলগঞ্জে একটি মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায় ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট। কিন্তু অনুমোদন পাওয়ার আগে থেকেই সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা হয়। এরপর সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাব ও খাদ্য সংকটে বিভিন্ন সময়ে রোগাক্রান্ত বেশকিছু বন্যপ্রাণী মারা যায় সেখানে। 

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে কয়েকটি ভালুকছানা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রাঙামাটিতে মিনি চিড়িয়াখানায়। সেগুলোর একটি ছাড়া বাকিগুলো মারা যায়। বেঁচে থাকা ভালুকটির নাম রাখা হয় জাম্বু। সেই থেকে নিঃসঙ্গতায় একাকিত্বে দীর্ঘ দিনকাল পার করে আসছিল জাম্বু। অবশেষে সেই একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতার অবসান ঘটিয়ে জাম্বুকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হলো কক্সবাজারের চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। 

এদিকে ৭ জানুয়ারি বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক বরাবর চিঠি লিখে মিনি চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণীগুলোকে বন বিভাগকে হস্তান্তরের কথা জানান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার। এতে তিনি জানিয়েছেন, কিছু বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে রাঙামাটিতে মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। বর্তমানে অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোর প্রতিপালন ও সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় এসব বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

জেলা পরিষদের এ চিঠির তথ্য অনুযায়ী, রাঙামাটির মিনি চিড়িয়াখানায় থাকা বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ১৯টি। সেগুলোর মধ্যে ছিল একটি ভালুক, ৫টি বন মোরগ, ৪টি বানর, একটি হরিণ, ৬টি কচ্ছপ, ও ২টি সজারু। এগুলোর সর্বশেষ ভালুক জাম্বুসহ ১৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নিয়ে গেল বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। সেখানে কোয়ারান্টাইন ও যথাযথ চিকিৎসা শেষে প্রাণীগুলো বনে অবমুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়।

বন অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন বলেন, উদ্ধার হওয়া বন্যপ্রাণিগুলোর মধ্যে ভালুকটির শারীরিক অবস্থা ভালো। হরিণের অবস্থাও মোটামুটি। তবে চামড়ায় কিছুটা সমস্যা আছে। বানরের চামড়ায় সমস্যা আছে। অন্যান্য প্রাণীগুলো মোটামুটি আছে। এগুলোকে আমরা সাফারি পার্কে নিয়ে যাচ্ছি। মূলত আমি সাফারি পার্কের দায়িত্বে আছি। প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। সে কারণেই রাঙামাটি আসা। বন বিভাগের প্রাণী চিকিৎসক কম থাকায় আমাকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটিসহ সবখানেই যেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, নিঃসঙ্গ থাকলে অবশ্যই ভালুকটির মানসিক সংকট প্রকট হবে। পরিবেশ-প্রকৃতি বোঝার পর যদি প্রাণীকে আলাদা করা হয় তাতে সে প্রাণীর মনে চাপটা বেশি পড়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, রাঙামাটি জেলা শহরের এক প্রান্তে সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই চিড়িয়াখানাটি স্থাপন করা হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তাতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

রাঙামাটি মিনি চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী পালনকারী সোনাবী চাকমা বলেন, সেখানে বন বিড়াল, খরখোশ, ভালুক, হরিণ, গুঁইসাপ ছিল। কিছু কিছু প্রাণী মারা গেছে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি প্রাণীগুলো যাতে সুন্দর পরিবেশে থাকতে পারে। ভালুকটাকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে। ছোট থেকে আমি পালন করছি। ডাক দিলেই সে আমাকে চেনে। কুকুরের ছানার মতো ছিল, এখন তো অনেক বড় হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম