রাজবাড়ীতে কুকুরের তাড়া খেয়ে আদালত ভবনে ডেকে এক কৃষককে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ীর এক নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে। ওই ভ্যানচালক বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শনিবার বিকালে জেলা আদালতের একটি কক্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আহত ভ্যানচালকের নাম মো. আফজাল খাঁ (৩০)। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের মৃত আনছের খার ছেলে। এ ঘটনায় তিনি রাজবাড়ী সদর থানায় ওই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভ্যানচালক আফজাল খাঁ যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি শ্বশুরবাড়ি এলাকায় গেলে একটি কুকুর ধাওয়া করলে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং কুকুরটির মালিক কে তার সন্ধান করতে বলেন। স্থানীয় কেউ তাকে জানায় কুকুরটির মালিক আমি। তিনি ওই দিন রাজবাড়ী সদর থানার এক দারোগাকে দিয়ে আমাকে ডেকে পাঠান। শনিবার দুপুরের দিকে ভাইকে নিয়ে থানায় ওই দারোগার সঙ্গে দেখা করলে জানান, ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেন তাকে দেখা করতে বলেছেন। পরে ওই দারোগা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনের সঙ্গে ফোনে কথা বললে আমাদের বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার দিকে তার কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন।

তিনি বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট সুমনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সঙ্গে থাকা সবাইকে বের করে তিনি চেয়ারের সঙ্গে দুই হাত সামনের দিকে রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি নিয়ে পাছায় থেমে থেমে আঘাত করেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে ২৫ থেকে ৩০টি আঘাত করেন। নির্যাতনের বিষয়ে যেন কাউকে কিছু না বলি শাসিয়ে লোক ডেকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। আমি ব্যথায় হাঁটতে পারছিলাম না। এ সময় দূর থেকে আমার মেজো ভাইসহ অন্যরা এগিয়ে এলে তাদের কাঁধে হাত রেখে কষ্ট করে সদর থানায় যাই। পুলিশ আমাকে চিকিৎসা নিতে বললে সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। এরপর থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি।

আফজাল খাঁর বড় ভাই সাহেব আলী বলেন, বাড়িতে পুলিশ দেখে আমরা খুব চিন্তিত হই। পরে শনিবার দারোগার সঙ্গে দেখা করলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট সুমন দেখা করতে বলেছেন বলে জানান। পরে ম্যাজিস্ট্রেট সুমনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আমাদের সবাইকে তার রুম থেকে বের করে আমার ভাইকে অমানুষিক নির্যাতন করেন। কী অপরাধ ছিল আমার ভাইয়ের। আমরা এ নির্যাতনের বিচার চাই। 

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় আফজাল খাঁ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এলে তাকে ভর্তি করা হয়। তার পশ্চাৎদেশে এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে এতে তার সুস্থ হতে অন্তত দুই মাস সময় লাগবে।

রাজবাড়ীর এক নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন হোসেনকে ফোন দিলে তিনি প্রথমে ফোনটি কেটে দেন। পরে তিনি আবার ফোনটি ধরে বলেন, আমি তাকে ডেকে এনে আমাকে কুকুর তাড়ানোর বিষয়টি বলেছি। একটি মহল এটাকে পুঁজি করে নানারকম কুৎসা রটনা রটাচ্ছেন।  ভ্যানচালককে পেটানোর অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীন যুগান্তরকে বলেন, নির্যাতনের স্বীকার আফজাল খাঁর লিখিত অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন। তিনি সিদ্ধান্ত দিলেই পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।