পাউবো কার্যালয়ে মুখোশধারী চরমপন্থিদের গুলি, আতঙ্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করেছে মুখোশধারী চরমপন্থিরা। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চরমপন্থি গ্রুপ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রোববার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে পাউবো অফিসে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। কারা হঠাৎ করে এ কাজ করল তার জবাব খুঁজতে কাজ করছে পুলিশ। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা কি কারণে এমন ঘটনা ঘটল তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা করছেন। এক সময় ঠিকাদারি কাজকে ঘিরে মানুষের মাথা কেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস চত্বরে রেখে আতঙ্ক ছড়ানোর মতো ঘটনাও আছে এ জেলায়।
এদিকে তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। তবে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। ঘটনাস্থলের আশপাশে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পাউবো কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এনডিআর প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে ৬০ গ্রুপের কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। উক্ত কাজের ৪৫ গ্রুপের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বাকি ১৫ গ্রুপের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের টেন্ডারের সিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির ওই টেন্ডারকে সামনে রেখে একটি চরমপন্থি গ্রুপ পাউবোর সব কাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছেন। ওই চরমপন্থি গ্রুপটি নিজেদের শক্তি জানান দিতে এ গুলির ঘটনা ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ ঠিকাদাররা।
পাউবো কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মী সম্মেলন চলছিল। বেলা দেড়টার দিকে পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ অনুষ্ঠানে আসা অধিকাংশরা চত্বরের মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হঠাৎ দুইবার বিকট শব্দ শুনতে পান। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ভবন থেকে মাত্র ২০ ফিট দূরে সীমানা প্রাচীর। এর পাশেই গড়াই নদী। সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন শহরের জিকে এলাকার সড়ক।
কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত আনসার সদস্য মামুন খন্দকার বলেন, তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান। এরপর দৌড়ে সীমানা প্রাচীর দিয়ে উঁচু দিয়ে কাউকে দেখতে পান না। সেখানে দৌড়ে কয়েকটা শিশু আসে। তারা পড়ে থাকা একটি গুলির খোসা হাতে নিয়ে পাউবোর ভেতর ফেলে দেয়। গুলির শব্দ শুনে পাউবোর চত্বরে থাকা সবাই ছুটে আসে সীমানা প্রাচীরের দিকে।
ঘটনার পর পাউবোর চত্বরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে সবার সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, অনুষ্ঠান চলাকালে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
স্থানীয়রা জানান, সীমানা প্রাচীরের পাশে জিকে এলাকা। ওই এলাকায় বালুর ছোট ছোট স্তূপ রয়েছে। সেখানে কয়েকজন শিশু ঘটনার সময় খেলা করছিল। পাউবোর সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেও বালুর স্তূপ রাখা আছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় শ্রেণির এক শিশু বলেন, সেসহ আরও দুজন শিশু খেলা করছিল। জোরে দুইটা শব্দ শুনতে পায় তারা।
এরপর দেখে দেয়ালের (পাউবোর সীমানা প্রাচীর) কাছ থেকে দুজন দৌড়ে বালুর ওপর দিয়ে গড়াই নদীর দিকে যাচ্ছে। তাদের একজনের হাতে বন্দুক ছিল। এক পর্যায়ে বন্দুকটি পড়ে গেলে সেটি তুলে আবার দৌড় দিয়ে নদীর দিকে চলে যায় ওই ব্যক্তি। আরেকজন নদীর ধারে বস্তি এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তাদের সঙ্গে আসা অন্য একজন মোটরসাইকেলে দ্রুত চলে যায়। পরে দেয়ালের ওপর দিয়ে এক আনসার গুলির খোসা চাইলে সে খোসাটি পাউবোর সীমানার মধ্যে ছুড়ে দেয়।
জিকের ঘাটের এক বাসিন্দা বলেন, গুলির শব্দ শোনার পর তারা এলাকায় আসেন। তিনজন ঘটনার সময় এসেছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন। ওপারে হরিপুরের চরে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে বলে জানান তিনি। এ কারণে গুলি ছুড়ে তারা নদী পথে আবার ওদিক চলে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন গুলির বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি কাজের টেন্ডার হয়েছে। এছাড়া আগামী সপ্তাহে আরও একটি কাজের টেন্ডার আছে। এসব কাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে চরমপন্থিদের ব্যবহার করে ঠিকাদারদের কোনো পক্ষ এমন কাজ করাতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, এ রকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। ঘটনার সময় তিনি কার্যালয়ে নামাজ পড়ছিলেন। তিনিও দুটি বিকট শব্দ শুনেছেন। কেন কী কারণে হয়েছে তা ধারণা করতে পারছেন না। সম্প্রতি পাউবোতে কোনো দরপত্র আহ্বান বা ওপেনের কোনো বিষয় নেই। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেহাবুর রহমান বলেন, পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। পাউবোর সীমানার বাইরে ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শী এক শিশুর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। গুলি করার পর দুজন ব্যক্তি বালুর ভেতর দিয়ে গড়াই নদীতে নৌকাযোগে চলে গেছে জানা গেছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।