ভূরিভোজ করিয়ে ছাত্র আন্দোলনে হামলার সিদ্ধান্ত দেন এমপি নিজাম

ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আটক ছাত্রলীগ কর্মী তারেক হোসেন (১৯)। ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত মুস্তারির আদালতে জবানবন্দিতে এসব কথা জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী তারেক হোসেনকে শহরের রাজাঝি দীঘিরপাড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর চাড়ীপুর গ্রামের আলিমুদ্দিন এলাকার মো. নুর হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হকের অনুসারী।
গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
পুলিশকে জানান, গত ৪ আগস্ট ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি সভা করে ভূরিভোজ করান। ভোজ শেষে ছাত্র আন্দোলনে হামলার সিদ্ধান্ত দেন। সেই অনুযায়ী ৩-৪শ নেতাকর্মী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেন।
আসামি তারেক যে দলে ছিলেন সেই দলে অর্ণব, রাকিবসহ ৯ জন গুলি চালিয়েছিলেন। একপর্যায়ে তারেক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত জবানবন্দিতে তিনি একই কথা বলেন। পরে আদালতের নির্দেশে আসামিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার মহিপাল এলাকায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলি ছুড়লে কলেজশিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রাজনৈতিক আতঙ্কে মাহবুবুলকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না করে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ৭ আগস্ট তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেদিন সন্ধ্যায় মাহবুবুল মারা যান।
নিহত মাহবুবুল হাসান সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের নোমান হাসানের ছেলে। তিনি ছাগলনাইয়ার আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় নিহত মাহবুবুলের ভাই মো. মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪-৫শ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন।
ফেনী মডেল থানার ওসি মম সিংহ ত্রিপুরা যুগান্তরকে বলেন, আসামি নিজে হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জবানবন্দিতে। এছাড়া অস্ত্র হাতে কারা ছিলেন, কারা গুলি চালিয়েছেন, কার নির্দেশে তারা এসব করেছেন- জবানবন্দিতে সব ওঠে এসেছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালালে ঘটনাস্থলে এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ৯ জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এ পর্যন্ত ৮টি হত্যা ও ১৩টি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে।