Logo
Logo
×

সারাদেশ

বেকার তিন যুবকের কলা-কাঁঠালের চিপসে ব্যাপক সাড়া

Icon

সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম

বেকার তিন যুবকের কলা-কাঁঠালের চিপসে ব্যাপক সাড়া

শিক্ষা জীবন শেষ করে সরকারি চাকরির প্রবল আশা ছিল সুবিমল, রিটম ও প্রমোদ চাকমার; কিন্তু সরকারি চাকরি সোনার হরিণ, যা তাদের পক্ষে ধরা আকাশকুসুম ভাবনা। তাই চাকরির পেছনে ছুটে সময়ক্ষেপণ না করে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নেন রাঙামাটি শহরের আসামবস্তির সুবিমল চাকমা, রিটম চাকমা ও প্রমোদ চাকমা।

এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের বাড়িঘরের আঙিনায় বাঁশের বেড়ার ছোট্ট একটি ঘরে পাহাড়ে উৎপাদিত ফল কলা ও কাঁঠাল দিয়ে চিপস তৈরির কাজ শুরু করেন এই তিন তরুণ।

তাদের তৈরি পাহাড়ি কাঁঠাল ও কলার চিপস ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে স্থানীয় হাটবাজারে। অধিক উৎপাদনে যেতে পারলে রাঙামাটির তৈরি ‘ব্যানানা ও জেকফ্রুট’ চিপস জেলার বাইরে এমনকি বিদেশেও রপ্তানির সম্ভব হবে বলে আশাবাদ তাদের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই চিপস নিয়ে বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও দেখছেন এই তিন তরুণ উদ্যোক্তা। 

উদ্যোক্তারা বলেন, রাঙামাটিসহ পাহাড়ে মৌসুমি ফলের উৎপাদন প্রচুর; কিন্তু ন্যায্য মূল্যের অভাবে ও সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় প্রতি বছর নষ্ট হয়ে যায় প্রচুর ফলমূল। এতে লোকসানে কৃষকরা। ক্ষতির প্রভাব ফেলছে পাহাড়ের অর্থনীতিতে। তাই আত্মনির্ভরতা অর্জন, আত্মকর্মসংস্থান তৈরিসহ এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রথম পর্যায়ে কলা কাঁঠাল থেকে চিপস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

তাদের মতে, পাহাড়ে উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, আনারস ও বারোমাসি কলার কদর বেশি; কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্গমতার কারণে ন্যায্যমূল্যের অভাব ও সঠিক দাম না পাওয়ায় প্রতি বছর বাগানে ও পথেই নষ্ট হয় এসব প্রচুর মৌসুমি ফল। এতে বঞ্চিত হন কৃষকরা। তাই পাহাড়ে উৎপাদিত মৌসুমি ফল দিয়ে চিপস তৈরির উদ্ভাবন রাঙামাটির এ তিন তরুণ উদ্যোক্তার।

রিটম জানান, প্রথমে কাঁচামাল বাজার থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো চিপস তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। প্রতিবারে দুই কেজি করে কাঁচামাল ভেজে পরে সেগুলো মেশিনে ডিউলিং শেষে মসলা মেশালেই তৈরি হয় সুস্বাদু কাঁঠালের চিপস। একই প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে কলার চিপসও। কাঁচামাল হিসেবে কলা সারা বছর মিলবে। আর কাঁঠাল বারো মাস ধরে উৎপাদিত না হলেও মৌসুমের সময় পর্যাপ্ত কাঁচামাল সংগ্রহ করে হিমাগারের সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রমোদ চাকমা জানান, আমাদের আম, কাঁঠাল, কলা ও আলুর চিপস তৈরির উদ্যোগ রয়েছে। ভিন্নতার মধ্যে কাঁঠাল ও কলা রয়েছে সেগুলো আগে শুরু করেছি। পরে ধাপে ধাপে বাকিগুলোর তৈরি শুরু করব। প্রতি কেজি কাঁঠাল থেকে ৩০০ গ্রাম চিপস উৎপাদন করা যায়। ডিউলিং করে ডাইং শেষে কোনো প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার ছাড়াই অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশে উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে। পরে প্যাকেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিপস ভরে সেগুলো প্যাকেজজাত করা হয়ে থাকে।

মূল উদ্যোক্তা সুবিমল চাকমা জানান, আলু বা ভুট্টার চিপস সারা দেশে তৈরি হয়। কিন্তু কাঁঠালের বা কলার চিসপ এর আগে দেশে কোথাও হচ্ছিল কিনা তা জানা নেই। তাই কাঁঠাল ও কলার চিপস হয়তো কেউ খেতেও পাননি। এ ভাবনা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ। এজন্য প্রথমে ২০২২ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) পোস্ট পারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত কলা ও কাঁঠালের দাম পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার তিন জেলার কোথাও সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেই। কৃষক যাতে তার উৎপাদিত ফলের সঠিক দাম পান সে চিন্তা আমরা করছি। আপাতত দুইটি অনলাইন প্লাটফর্মে আমাদের তৈরি কলা ও কাঁঠালের চিপস বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি প্যাকেটের মূল্য রাখছি ৩০ টাকা করে। আমাদের কারখানায় বর্তমানে ছোট্ট মেশিনে প্রতিদিন ৩০০ প্যাকেট চিপস উৎপাদন করা সম্ভব হয়। তবে আমাদের খুব শিগগিরই বড় কারখানা চালুর চিন্তা রয়েছে।

সম্ভাবনা নিয়ে রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছিম হায়দার জানান, পাহাড়ে উৎপাদন মৌসুমে আম, কাঁঠাল, আনারস ও কলা প্রচুর উৎপাদন হয়। কিন্তু সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক ফল বাগানেই নষ্ট হয়। এসব ফলের এমন বিকল্প ব্যবহার করা গেলে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড়ে। যারা এমন কাজ শুরু করেছেন তাদের সাফল্য কামনা করি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম