Logo
Logo
×

সারাদেশ

রামগতিতে টয়লেট নির্মাণেও দুর্নীতি

Icon

শাহরিয়ার কামাল, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৫ এএম

রামগতিতে টয়লেট নির্মাণেও দুর্নীতি

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড গোপী মোহন দাশের বাড়িতে নির্মাণাধীন টয়লেট। হাউজ করার জন্য পাশে গর্ত করে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার। ছবি: যুগান্তর।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভায় ইমপ্রোভড হাউজহোল্ড টয়লেট নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে গৃহভিত্তিক ৭শ আধুনিক টয়লেট নির্মাণে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। পুরোনো ইট আর নিম্নমানে খোয়া দিয়ে যেনতেনভাবে ঠিকাদার টয়লেট নির্মাণ করছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন। 

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের ৩০টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটারি প্রকল্পের আওতাভুক্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে রামগতি পৌরসভায় ইমপ্রোভড হাউজহোল্ড টয়লেট নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহভিত্তিক ৭শ আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। কার্যাদেশের সিডিউল মোতাবেক প্রতিটি টয়লেট নির্মাণের শুরুতে ৩ ইঞ্চি সিসি ঢালাই, ১০ রদ্দার ইটের গাঁথুনি, প্রতি রদ্দায় ৪৫টি ইট, ৫ ইঞ্চির দেওয়াল ৭ ফুট, ছাদ ৪ ফুট ২ ইঞ্চি ও ৬ ফুট ২ ইঞ্চির ২৬ পিচ রড দিয়ে ৩ ইঞ্চি পুরুত্বের ঢালাই, ১২টি রিং স্লাব, ১টি ৩শ লিটারের পানির ট্যাংকি এবং হাফ ঘোড়া বৈদ্যুতিক মোটর থাকতে হবে। এসবে সমন্বয়ে প্রতিটি টয়লেট নির্মাণে বরাদ্দ হয় ৭০ হাজার ৩শ টাকা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শামীম এন্টারপ্রাইজ, একতা ট্রেডার্স, মুক্তা এন্টারপ্রাইজ, তরুণ এন্টারপ্রাইজ, ফাতেমা এন্টারপ্রাইজসহ প্রায় ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। পরে প্রকৃত ঠিকাদার আড়ালে থেকে কমিশনে টয়লেট নির্মাণের কাজ করাচ্ছেন তাদের সিন্ডিকেটের অন্য লোক দিয়ে। ঠিকাদার থেকে সাব ঠিকাদার কাজ নিয়ে নেয় ৩০/৩৫ হাজার টাকায়। ফলে সিডিউল মোতাবেক মানসম্মত টয়লেট নির্মাণ হচ্ছে না। এসব অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই। ফলে চলছে ভয়াবহ দুর্নীতি আর লুটপাট।

অভিযোগে জানা গেছে, মুক্তা এন্টারপ্রাইজ, তরুণ এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে পাওয়া টয়লেট নির্মাণ কাজ সাব ঠিকাদার হিসেবে বাগিয়ে নিয়ে কাজ করছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজমিস্ত্রি। এদের মধ্যে যথাক্রমে দিদার মেস্তরী ৫০টি, জসিম ৪০টি, ইউসুফ ৩০টি, সাইফুল ১২টি, কামাল ১২টি ও বেলাল মিস্ত্রি ১২টির কাজ করছেন। এর বাইরে অন্য টয়লেটের কাজ কোন ঠিকাদার পেয়েছেন জানতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী তানভির হোসেন তথ্য দিতে রাজি হয়নি। 

এমনকি, এ প্রকল্পের অধীনে পৌরসভায় মোট কতটি টয়লেট বরাদ্দ করা হয়েছে আর এর মধ্যে কতটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানার জন্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ে কিংবা পৌরসভা কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেও তা পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্পের কাজ মাঠপর্যায়ে তদারকি করতে কোনো পর্যবেক্ষক নেই। 

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী তানভিরের যোগসাজশে এমন অনিয়ম হচ্ছে। সপ্তাহখানেক ধরে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, পৌরসভায় এ পর্যন্ত যেসব গৃহভিত্তিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে, তার সবগুলোতে পুরোনো খোয়া ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া নির্মাণকালে গৃহস্থের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২-৩ বস্তা করে সিমেন্ট। মোটরের জন্য পানির পাম্প না বসিয়ে শুধু মোটরটি গৃহস্থকে ধরিয়ে দিয়েই তারা খালাস। ৩শ লিটারের পানির ট্যাংকি দেওয়া হয়েছে অখ্যাত কোম্পানির ও নিম্নমানের। বেশিরভাগ টয়লেটে সিসি ঢালাই করা হয়নি। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের পুটানি বাড়ির হাসান, মুসলিম হেলাল ও গোপি মোহন, ২নং ওয়ার্ডের প্রভাত পণ্ডিতের বাড়ির প্রানোত্তম, একই ওয়ার্ডের মরনী মাস্টার বাড়ির রূপম দাস ও প্রবেশ্বর দাস, পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের খাতির মাগো বাড়ি, ৪নং ওয়ার্ডের চৌকিদার বাড়ি, ৩নং ওয়ার্ডের মনাফের বাড়িসহ অসংখ্য সুফলভোগীদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সবগুলো কাজ করা হয়েছে অত্যন্ত দায়সারাভাবে। নির্মাণকালীন শ্রমিকদের ভাত খাওয়ানোর পাশাপাশি সিমেন্টসহ কিছু উপকরণ দিতে সুফলভোগীদের বাধ্য করা হয়েছে। 

সংক্ষুব্দ সুফলভোগী হাসান, জয়ারানীসহ কয়েকজন জানায়, নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করলেও ঠিকাদার কোনো পাত্তা দেয়নি। কাজ চলাকালে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকেও তারা দেখেননি। এ বিষয়ে একতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ডা. হেলাল বলেন, আমি ১৪টি টয়লেট নির্মাণের কাজ করছি। কোনো অনিয়ম করিনি। তবে অন্য ঠিকাদাররা অফিস ম্যানেজ করে মাত্র ৬ ব্যাগ সিমেন্ট, মানহীন ইট, সিসি ঢালাই ছাড়া কাজ করেছে। এতে তারা মাটির নিচে ১০ ইঞ্চি গাঁথনি না দিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ ইট চুরি করছে। একাধিক স্থানে টয়লেট নির্মাণ করার পর তা ভেঙে পড়েছে বলে জানান তিনি। 

একইভাবে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কমিশনে কাজ করা দিদার, জসিম, ইউসুফ, সাইফুল ও কামাল জানান, ঠিকাদারের হয়ে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছেন তারা। কোনো অনিয়ম হয়নি। 

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী তানভির হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না। তবে এ প্রকল্পে ৭শ টয়লেট অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১শ ৫০টি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান রয়েছে ৩৭০টি। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিলকিছ আক্তার জানান, সরজমিন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম