দালালের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মুক্তিপণ নেওয়ার অভিযোগ প্রবাসীর
যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম
বগুড়ার আমতলীতে এক দালালের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ করেছেন সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা এক প্রবাসী। তার অভিযোগ, সৌদিতে তাকে ও তার ভাইকে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা। নিয়েছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণও। বিষয়টি নিয়ে দেশে এসে প্রতিবাদ করায় দিয়েছে ছিনতাইয়ের মামলাও। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই দালাল।
ভুক্তভোগী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম আমতলী গ্রামের আব্দুল হাই গাজীর ছেলে
সাইদুল গাজী। আর দালালের নাম রুবেল হাওলাদার।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে রুবেলে সঙ্গে
৮ লাখ টাকার চুক্তিতে সৌদিতে যায় সাইদুল ও তার ফুফাতো ভাই মামুন হাওলাদার। জেদ্দা বিমান
বন্দরে নামার পরই দালাল চক্রের সদস্য ফুয়াদ তাদের একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে একটি
রুমে আটকে রাখে। সেখানে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
জেদ্দা অবতরণের চারদিন পর দালাল চক্রের আরেক সদস্য মনির এসে তাদেরকে
মরুভূমির একটি বন্ধ মুরগি ফার্মে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের পাঁচ মাস ১০ দিন আটকে রাখে
তারা। এ সময়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে দালাল চক্রের সদস্যরা। চায় মুক্তিপণও।
দুই ভাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও চক্রটির হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
এদিকে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর সৌদি পুলিশের কাছে সাইদুলকে ধরিয়ে দেয় দালাল
রুবেল ও তার সহযোগীরা। ১২ দিন কারাবাস শেষে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর সৌদি পুলিশ তাকে মুক্তি
দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। অপরদিকে সাইদুলের ফুফাতো ভাই মামুন সৌদি আরবে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পরিবারের কাছে তার কোনো হদিস নেই।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাইদুল ও দালাল রুবেলের মধ্যে এ নিয়ে হাতাহাতির
ঘটনা ঘটে। এর জেরে রুবেল সাইদুলের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে আমতলী
থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
সাইদুল অভিযোগ করে বলেন, রুবেলের নির্দেশে মনির তাদের আটকে রেখে নির্যাতন
চালিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে দেড় লাখ টাকা নেয়। এরপর রুবেল মেয়াদ উত্তীর্ণ আকামা দিয়ে আমাদের
দুই ভাইকে ছেড়ে দেয়। ওই আকামা নিয়ে পালিয়ে বেড়াই আমারা। এ ঘটনা নিয়ে দালাল রুবেলের
সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়।
সৌদিতে নির্যাতনের স্বীকার সাইদুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ও আমার ভাইয়ের জীবনটাকে দালাল রুবেল শেষ করে দিয়েছে। আমি তো জেল খেটে দেশে ফিরেছি, কিন্তু আমার ভাই কোথায় আছে তা আল্লাহই জানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রুবেল কোম্পানির ভিসার কথা বলে আমাকে ও আমার ফুফাতো ভাইকে সৌদি পাঠায়। সেখানে নিয়ে দুই দালালের কাছে আমাদের বিক্রি করে দেয়। দালাল চক্র আমাদের দুই ভাইকে নির্যাতন করেছে। মুক্তিপণও নিয়েছে। পরে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। রুবেল আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আবার আমাকে হয়রানি করতে থানায় ছিনতাইয়ের মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। ’
এ সময় রুবেল ও এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি জানান সাইদুল।
এদিকে দুই ভাইকে সৌদিতে পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও তাদের নির্যাতন ও
মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুবেল। তিনি বলেন, সাইদুল লোকজন নিয়ে আমাকে
মারধর করেছে। এরপর টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। ’
আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘সৌদিতে নির্যাতন ও মুক্তিপণের
অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মারধরের একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম।
ওই বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। ’