Logo
Logo
×

সারাদেশ

বাবার সঙ্গে জোঁক পালন করে ৫ বছরের সাদিয়া

Icon

সুকুমল কুমার প্রামাণিক, রাণীনগর (নওগাঁ)

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম

বাবার সঙ্গে জোঁক পালন করে ৫ বছরের সাদিয়া

৫ বছর বয়সি ছোট্ট (শিশু) সাদিয়া আক্তার। বাবার সঙ্গে বাড়িতে জোঁক লালন-পালন করে। বাবা মানিক মণ্ডলের খাল-বিল থেকে ধরে আনা একেকটি জোঁকের সঙ্গে গড়ে তুলেছে বন্ধুত্ব। বাড়ির আশপাশে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলার পাশাপাশি জোঁক নিয়েও সে খেলাধুলা করে। জোঁক যেন তার বাড়িতে খেলার সঙ্গী।

বাবা মানিক মণ্ডল পেশায় একজন গ্রাম্য কবিরাজ। মা মিনুকা বেগম ও দাদি নুরজাহান বাড়ির সামনে রাস্তার মোড়ে মুদি দোকান চালিয়ে সংসারে সহযোগিতা করেন। সাদিয়া আক্তাররা এক ভাই, এক বোন। বাবা মানিক ছোটবেলা থেকে খাল-বিল থেকে জোঁক ধরে নিয়ে এসে বাড়িতে লালন পালন করেন। বাবা মেয়ের স্বপ্ন ভবিষ্যতে জোঁকের একটি খামার করার।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে সাদিয়া ও মা নুরজাহানকে নিয়ে বসবাস মানিক মণ্ডলের। তার মূল পেশা হাটে-বাজারে কবিরাজি ওষুধ বিক্রি করা আর জোঁক লালন-পালন করা। বর্তমানে তার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ১৫০টি জোঁক। যার একেকটির ওজন দেড়শ থেকে ২০০ গ্রাম। নিজের জোঁক পালনের কাজ স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে শিখিয়েছেন মানিক মণ্ডল। তিনি পালনের পাশাপাশি একেকটি জোঁক ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন।

বাবার দেওয়া কবিরাজি পেশা নিজে হাতে নিয়েছেন মানিক মণ্ডল; কিন্তু ছোটবেলা থেকে জোঁক ধরার প্রতি তীব্র শখ থেকে এতগুলো সংগ্রহ করে রেখেছেন। তেমনি তার ৫ বছরের শিশুকন্যাকে শিখিয়েছেন জোঁকের সঙ্গে কিভাবে বন্ধুত্ব করা যায়। মেয়ে সাদিয়া এখন থেকেই বন্ধুত্ব করেছে প্রতিটি জোঁকের সঙ্গে। জোঁকের সঙ্গে খেলা করা, জোঁককে রক্ত খাওয়ানো, সময়ে সময়ে জোঁকের পানি পরিষ্কার করা সব কিছুই করতে পারে সে।

শিশু সাদিয়া আক্তার জানায়, জোঁক নিয়ে খেলা করতে আমার খুব ভালো লাগে। বাবার সঙ্গে জোঁক ধরতে মাঠে যাই। খাল-বিল থেকে নিজ হাতে জোঁক ধরে বাড়িতে নিয়ে আসি। জোঁককে রক্ত খাওয়ানোসহ সবকিছুই আমার ভালো লাগে।

সাদিয়ার বাবা জোঁক লালন-পালনকারী মানিক মণ্ডল জানান, জোঁক চাষ করা যায় না। খাল-বিল থেকে ধরে এনে তা ছোট থেকে বড় করা যায়। কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাটির হাড়িতে করে জোঁক পালন করি। জোঁক মূলত রক্ত খায়। তাই হাট-বাজারে কসাইদের কাছ থেকে গরু ছাগলের রক্ত সংগ্রহ করে তা জোঁকগুলোকে খাইয়ে বড় করি। দীর্ঘ ১২ বছর যাবত জোঁক সংগ্রহ করে আসছি।

তিনি জানান, জোঁক মূলত কবিরাজি চিকিৎসায় বেশি ব্যবহার হয়। এর তেল শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং এটি জীবিত অবস্থায় নানান চর্ম জাতীয় রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহার হয়ে থাকে।

মানিক মণ্ডল আরও জানান, দিন দিন ভূমিতে রাসায়নিকের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় জোঁক প্রায় বিলুপ্তের পথে। জোঁকগুলো থেকে কোনো দিন জোঁকের প্রজনন হয়নি বা দেখিনি। এর বিস্তার সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। যেহেতু এর প্রজনন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না, তাই ভবিষ্যতে জোঁকের খামার করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

এদিকে স্বামীর এমন কাজ বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছেন স্ত্রী মিনুকা বেগম। স্বামী জেলার বাহিরে হাট করতে গেলে জোঁকের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেন তিনিই।

অপরদিকে মানিকের জোঁক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে তার বাড়িতে। তারা জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে তারা দেখতে এসেছেন। এমন বড় বড় জোঁক তারা কোনোদিন দেখেননি। দেখে তাদের ভালো লেগেছে।

মানিক মণ্ডলের মা নুরজাহান বেওয়া জানান, আমি ও ছেলের স্ত্রী দোকান করে এবং ছেলে জোঁক পালন করে সংসার চালাই। আমার ছেলে চেষ্টা করছে জোঁক পালনের খামার করার জন্য; কিন্তু অভাবের কারণে ছেলে তা করতে পারছে না। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ছেলে বড় আকারে জোঁক লালন-পালনের খামার গড়ে তুলতে পারবে।

রাণীনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, জোঁক একটি হিরুডো গোত্রের প্রাণী। প্রাকৃতিক ইকো সিস্টেমের ভারসাম্য একটি প্রাণী এটি। জোঁকের প্রজনন মূলত প্রাকৃতিকভাবে হয়ে থাকে, এর আর্টিফিশিয়াল প্রজনন এখনো চোখে পড়েনি। মনে হয় এই প্রথম রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মানিক মণ্ডল বাড়িতে জোঁক লালন-পালন করছেন। আমরা তার জোঁক পালনের কথা শুনেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, মানিক মণ্ডল যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা খুব সুন্দর একটি উদ্যোগ। উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম