আগুনের লেলিহান শিখার মাঝ থেকে স্কুলছাত্রকে বাঁচাল একদল যুবক
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
সারা ঘরে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে গেছে দশম শ্রেণির ছাত্র নিতুন (১৪)। জানালা দিয়ে সে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে; কিন্তু তাকে বের করার কোনো উপায় নেই।
এ অবস্থায় এলাকার একদল যুবক ওই ঘরের লোহার জানালার পাশ দিয়ে দেয়াল ভেঙে তাকে দগ্ধ অবস্থায় বের করে গোয়ালন্দ উপজেলা হাসপাতালে পাঠান। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় হাসেম বেপারীর বাড়িতে মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আগুনে দগ্ধ হয়েছেন আরও দুইজন। পুড়ে গেছে বড় একটি চৌচালা টিনশেড ঘর এবং ঘরের ভেতরে বসবাসকারী ৪টি ভাড়াটিয়ার সব মালামাল।
ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপণ গাড়ি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের পাশে সড়কের মধ্যে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় এবং অপরিকল্পিত একটি ভবনের দেয়ালের জন্য দ্রুত সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া দীনবন্ধুর ঘর থেকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হতে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন আশপাশের মোট চারটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় আশপাশের প্রতিবেশীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করতে থাকেন। এর মধ্যেই ঘটে নিতুনের আটকে পড়ার ঘটনা ঘটে।
নিতুন বাড়ির ভাড়াটিয়া ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার নিমাই সরকারের ছেলে। আগুনে আরও দগ্ধ হয়েছেন ভাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সোমা বেগম (৪০) এবং অজ্ঞাতনামা আরও একজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে গোয়ালন্দঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফাইটাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ৪ জন ভাড়াটিয়া হলেন- দীন বন্ধু, কাঞ্চন বিশ্বাস, পলাশ ও জাহিদুল ইসলাম।
উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়া স্থানীয় যুবক সাইদ, সিয়ামসহ কয়েকজন বলেন, তারা অন্য কোনো উপায় না দেখে দেয়াল ভেঙে ভেতর থেকে নিতুনকে উদ্ধার করে। সে অনেকটা দগ্ধ হয়েছে। তবে তাকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে।
তারা অভিযোগ করেন, বাড়িটি অনেক বড়। বাড়ির মালিকসহ অনেক ভাড়াটিয়া ওই বাড়িতে থাকেন; কিন্তু বাড়িতে প্রবেশের জন্য মাত্র একটি দরজা রয়েছে।
গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের টিম লিডার মো. সাবেকুল ইসলাম জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হতে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আমরা সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করি; কিন্তু সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজসংলগ্ন সড়কের মধ্যে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় এবং অপরিকল্পিত একটি ভবনের দেয়ালের জন্য আমাদের অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি ঘটনাস্থলেই পৌঁছতে পারেনি। পরে ফিতা টেনে নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি।