বিয়ের কথা বলে কক্সবাজারে নিয়ে ধর্ষণ, মামলা করায় তরুণীকে হয়রানি
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম
বিয়ের কথা বলে পাবনার বাসিন্দা এক তরুণী (২৯) সহকর্মীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে শোভন আল ফুয়াদ (৩২) নামে এক এনজিও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় উনাপালং মাছবাজার এলাকায় এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রতারিত তরুণী আদালতে মামলা করেন; কিন্তু মামলা করেও প্রতিকার তো দূরের কথা উপরন্তু পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ওই তরুণী।
অভিযুক্ত শোভন আল ফুয়াদ সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার অচিনতল পূর্বপাড়া গ্রামের মো. আব্দুস সামাদের ছেলে এবং প্রতারণার শিকার তরুণী পাবনা শহরতলীর সিঙ্গা মহল্লার বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের রামু উপজেলায় শেড নামক একটি এনজিওতে চাকরির সুবাদে ফুয়াদের সঙ্গে পাবনার তরুণীর পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা এবং পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফুয়াদ ওই এনজিওর বিপিআরএ প্রকল্পে ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে এবং তরুণী নিউট্রিশন কাউন্সিলর পদে চাকরি করতেন। কর্মরত থাকা অবস্থায় তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং এরপর বিভিন্ন সময় ফুয়াদ তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখান। এরই মধ্যে তরুণী গত বছরের ৪ জুলাই চাকরি ছেড়ে অন্য একটি এনজিওতে চাকরি নেন; কিন্তু ফুয়াদ যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিয়ের কথা বলে ফুয়াদ ওই তরুণীকে নিজ বাসা উখিয়া উপজেলার উনাপালং মাছবাজারের পাশে নিয়ে বিয়ের পরিবর্তে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।
এ সময় ওই তরুণী কাবিননামা ছাড়া মিলনে বাধা দিলে ফুয়াদ তরুণীর তলপেটে, দুই রানে ও পিঠে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর জখম করেন। নির্যাতনের পর আরেক সহকর্মীর সহযোগিতায় সেখান থেকে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে ফিরে আসেন তরুণী। এরপর রামু থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করলে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, এ ঘটনার পর বিষয়টি এনজিও কর্তৃপক্ষকে জানালে ফুয়াদ এ বছরের ১৪ জানুয়ারি চাকরি ছেড়ে দেন।
ওই তরুণী আরও অভিযোগ করেন, আদালতে মামলা করার পর প্রতারক ফুয়াদ আবারও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বলেন এবং সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় মীমাংসা হয়ে গেছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালান। আসলে সে বিয়ে নয়, বরং মামলাটি নষ্ট করার জন্য আবারও তার (তরুণী) সঙ্গে প্রতারণা করেন বলে জানতে পারেন। কেননা আদালত মামলাটি গ্রহণের পর তদন্তের জন্য থানাকে দায়িত্ব দিলেও দীর্ঘ দেড় মাসেও আদালতের কাগজপত্র থানায় পৌঁছেনি।
তরুণী অভিযোগ করেন, প্রতারক ফুয়াদ টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে মামালার কাগজপত্র ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। এ অবস্থায় গত ২২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে তরুণী আদালত থেকে কাগজপত্র তুলে হাতে হাতে উখিয়া থানায় দিয়ে আসেন; কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত থানা থেকে পুলিশ তাকে ফোন করেনি বা মামলার কী অবস্থা তাও জানায়নি। বর্তমানে তরুণী ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিও টিমের সঙ্গে কাজ করছেন।
তরুণী বলেন, প্রতারক ফুয়াদ বর্তমানে কক্সবাজারেই রয়েছেন এবং সেখানে থেকে তিনি বিদেশে পাড়ি জমানোর পাঁয়তারা করছেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, আমি এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এদিকে অভিযুক্ত ফুয়াদের বক্তব্য জানতে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, ওই তরুণীর দেওয়া আদালতের কাগজপত্র পেয়েছি। তদন্ত করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।