Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভারতের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্সে ৩ বছরে রোগী উঠেছে একজন

Icon

মো.ফজলে রাব্বি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম

ভারতের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্সে ৩ বছরে রোগী উঠেছে একজন

রোগীদের কোনো কাজে আসছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪টি উপজেলার সরকারি হাসপাতালে ভারতের দেওয়া উপহার এনআইসিইউ সেবা সম্বলিত চারটি অ্যাম্বুলেন্স। তিন বছর ধরে গ্যারেজে তালাবদ্ধ পড়ে আছে এগুলো। এ সময়ের মধ্যে রোগী উঠেছেন মাত্র একজন।

এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় এগুলোর ইঞ্জিন ভারি ও বডি হালকা হওয়ায় চালকরা সড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ফলে গন্তব্যে যেতে সময় লাগে বেশি। এছাড়া এতে এনআইসিইউর নামে যে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে তা নামমাত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে করোনা মহামারির পর উপহার হিসেবে এনআইসিইউ সম্বলিত ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ সরকারকে দেয় ভারত সরকার। এর মধ্যে একই বছরের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় এক অনুষ্ঠানে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হাতে ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন।

এর পরের বছর ২০২২ সালের ৭ মার্চ এক অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন। এ নিয়ে জেলায় চারটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার পাওয়া যায়।

এরপর নানান সমস্যার কারণে এগুলো ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে পেরেছে মাত্র একদিন। এই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে সময় লেগেছে ৭ ঘণ্টা, যেখানে সাধারণ একটি অ্যাম্বুলেন্সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে সময় লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। এ অবস্থায় রোগীর স্বজনরা পড়ে যান অস্বস্তিতে।

এত সময় লাগার কারণ হিসেবে চালকরা জানান, অন্যান্য অ্যাম্বুলেন্স থেকে এর লোড অনেক বেশি। ফলে সড়কে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাপনা করা কঠিন। কারণ এটি অন্যান্য অ্যাম্বুলেন্স থেকে ভিন্ন। এর সঙ্গে সব সময় একজন চিকিৎসক থাকতে হয়। 

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক নুরুজ্জামান বলেন, ভারতীয় উপহারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে প্রথম দিন রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় দেখা দেয় বিপত্তি। অ্যাম্বুলেন্সের গতি হবে দ্রুত, কিন্তু এই অ্যাম্বুলেন্সের যে গতি উঠছিল তা দেখে রোগীর স্বজনরা ক্ষেপে যান। ৩ ঘণ্টার পথ যেতে সময় লেগে যাচ্ছিল ৬-৭ ঘণ্টা। এ অবস্থায় তো রোগী মারা যাবে। তাই মাঝ রাস্তায় রোগী নিয়ে নেমে অন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে যান তারা। এরপর থেকে এটি নিয়ে আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি।

একই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার ঢালি জানান, রাস্তায় চালানোর সময় এর গতি উঠে না। নানান সমস্যার কারণে গত তিন বছর ধরে গ্যারেজ পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্সটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান জানান, পিকআপের বডিতে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে দিয়েছে। হাইওয়েতে এটি অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় এবং চলন্ত অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায়। রোগীকে তুলে দিতে হয় অন্য অ্যাম্বুলেন্সে। এটি নামমাত্র আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স। গত তিন বছরে ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে পেরেছে মাত্র একদিন। এখন অচল হয়ে গ্যারেজে পড়ে আছে।

কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, উপজেলার সড়কের তুলনায় এই অ্যাম্বুলেন্সের বডি অনেক বড়। চালাতে সমস্যা হয়। এছাড়া এর জন্য তেল ও চালক কোনোটাই বরাদ্দ নেই। তাই গ্যারেজে পড়ে আছে।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বর্মণ জানান, অ্যাম্বুলেন্সগুলো দেওয়ার পরই আমরা অফিসিয়ালি জানিয়ে দিয়েছি এসব চলার মতো রাস্তা আমাদের নেই। এরপর গত তিন বছরে ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে পেরেছে মাত্র একদিন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম