Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিডিআর হত্যার দুঃখগাথা: বিয়ের তিন দিনের মাথায় কারাবরণ

Icon

এটিএম সামসুজ্জোহা, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

বিডিআর হত্যার দুঃখগাথা: বিয়ের তিন দিনের  মাথায় কারাবরণ

ছবি: সংগৃহীত

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা সাবেক বিডিআর সদস্য মোতাহার হোসেন মানিক (৩৬)। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে মায়ের কোলে ফেরেন তিনি। এ সময় তিনি মাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ফুলেল শুভেচ্ছা।

জানা গেছে, বিয়ের ৩ দিনের মাথায় কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে। কারাবরণের দীর্ঘ সময়ে তিনি হারিয়েছেন তার বাবাকে। মারা গেছেন তার অপর ৪ ভাইও। যদিও এসব তথ্য তাকে জানানো হয়েছে মৃতু্যর অনেক পরে। স্বজনদের জানাজায় তাকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। স্বজনহারা ওই বিডিআর জওয়ান কারামুক্ত হলেও আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারছেন না। কেবল গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। সান্ত্বনা এতটুকুই অন্তত মুক্তি মিলেছে।

মোতাহার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সম্পূর্ণ বিনাবিচারে আমি ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। যদি সঠিক বিচার হতো, তাহলে আমার কারাভোগ করতে হতো না। ১৬ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা অন্যরকম এক অনুভূতি। এটা বলে বোঝানো যাবে না। এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। মাত্র ছয় মাস চাকরির বয়সে বিনা অপরাধে ১৬ বছর জেলখানায় কেটেছে। কী থেকে কী হয়েছে, এটা সবাই জানে। মোতাহার হোসেন বলেন, ছয় মাস চাকরি আর ১৬ বছরের জেল। এই অল্প সময়ে কী অপরাধ করতে পারি বলেন? বাড়ি ফিরেছি, তবে একটাই চিন্তা আবারও আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।

সাবেক এই বিডিআর জওয়ান বলেন, আমাদের অনেক অসহায় ভাই এখনো ভেতরে আছেন। তাদের কোনো অপরাধ নেই। মিথ্যা মামলায় তাদের ফঁাসানো হয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের ছেড়ে দেওয়া। তিনি আরও বলেন, বাদী পক্ষও বলেছে আমাদের ওপর প্রহসনের মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই এটি বাতিল বা শেষ করতে পারে। ৫ আগস্ট গণ-অভু্যত্থানে ফ্যাসিজম দূর হওয়ায় আমি মায়ের কোলে ফিরে আসতে পেরেছি। জানি না আর কতদিন হয়রানি হতে হবে∏এই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।

এদিকে দীর্ঘ ১৬ বছর স্বামীর পথ চেয়ে কেটেছে স্ত্রী ববি আক্তারের। তবে একবারের জন্যও ঘরছাড়ার কথা ভাবেননি তিনি। অবশেষে সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। স্বামীকে পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, Èবিয়ের তিন দিনের মাথায় স্বামীকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। অপেক্ষায় ছিলাম কখন ফিরবেন স্বামী। দিন গড়িয়ে বছর হয়েছে, বছর গড়িয়ে দশক হয়েছে, তবু তার মুক্তি মেলেনি। ১৬ বছর পর অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। তবে এখনো দুশ্চিন্তা কমেনি। মামলায় আর কতকাল হয়রানি হতে হয় কে জানে।

মা মুক্তা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ৫ ছেলের মধ্যে ৪ জন মারা গেছে। মানিক শুধু বঁেচে আছে। চার বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন। কারাগারে দেখতেও যেতে পারিনি টাকার অভাবে। দিন গুনতাম কবে ফিরবে আমার বুকের ধন। অবশেষে ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আর যেন কোনো মাকে এভাবে কষ্ট ভোগ করতে না হয়।

জানা গেছে, মোতাহার হোসেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও কচুবাড়ী জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। তিন বছর আগে তার বাবা মারা যান। চাকরির ছয় মাসের মাথায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় ১৬ বছর জেল খাটেন মোতাহার। ট্রেনিং শেষে বাড়ি ফিরলে বাবা তাকে বিয়ে করান পাশের গ্রামের ববি আক্তারকে। তিন দিন সংসার শেষে কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। পরে বিডিআর হত্যার ঘটনায় তাকে কারাগারে যেতে হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম