Logo
Logo
×

সারাদেশ

হাসিনার পতনে বাঁচার স্বপ্ন জাগে তারিফুলের

Icon

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম

হাসিনার পতনে বাঁচার স্বপ্ন জাগে তারিফুলের

বিডিআর বিদ্রোহের মিথ্যা মামলায় ১৬ বছর কাশিমপুর কারাগারে কেটেছে তারিফুল ইসলামের। সেই সময়ের দুই মাসের সন্তান মোবিন ইসলাম এখন ৯ম শ্রেণিতে পড়ছে। শ্বশুর-শাশুড়িসহ হারিয়েছেন অনেক স্বজন। শেষবারের মতো দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের মুখ। সেই তারিফুল ইসলাম কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তারিফুল ইসলাম জানান, কারাগারে বন্দিজীবনে বাইরে আলো দেখার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে আন্দোলন হতো তখন আশা জাগত। কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার তা দমন করে দিলে আশা ভেস্তে যায়। সম্প্রতি গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনার পতনের খবরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন জাগে। আজ যাদের জন্য বাইরের আলো দেখা সেই ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পুনরায় চাকরিতে যোগদানের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সীমান্তের এই অতন্দ্রপ্রহরী।

তারিফুল ইসলামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফসলান্দি গ্রামে। আলম ও খোদেজা দম্পতির ছেলে। ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০ রাইফেল ব্যাটালিয়নে যোগ দেন তিনি। গত ২৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দুপুর ২টায় নিজ বাড়ির আঙিনায় পা রাখেন তারিফুল ইসলাম। এ সময় তাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি মির্জা লিমাকে বিয়ে করেন। ওই বছরেরই ২২ ডিসেম্বর মোবিন নামে এক ছেলেসন্তানের বাবা হন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন কর্মস্থল বান্দরবান থেকে ঢাকার পিলখানায় খেলাধুলার প্রশিক্ষণের জন্য যান সৈনিক তারিফুল। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সকালে গুলির শব্দ পান। ভেতরে গিয়ে দেখতে পান অস্ত্রধারীদের। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে বলে বিডিআর সদস্যদের।

এরপর যোগ দিতে বলে অপারেশনে। হুমকি দেওয়া হয় প্রাণে মেরে ফেলার। অস্ত্রধারী অধিকাংশই ছিল কম উচ্চতার। আবার কেউ কেউ ছিল অধিক উচ্চতাসম্পন্ন। তাদের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। তারা বিডিআর সদস্য ছিল না। আমরা যে অস্ত্র ব্যবহার করতাম অপারেশনে অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদের সে ধরনের অস্ত্র ছিল না।

তারিফুল ইসলামের একমাত্র সন্তান ১৬ বছর বয়সি মোবিন বলে, আমার দুই মাস বয়স থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলায় আব্বু কারাগারে ছিলেন। এত বছর পর আব্বুকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরতে পেরে কী যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আব্বুর হারানো চাকরিটা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

স্ত্রী মির্জা লিমা জানান, বিয়ের এক বছর পরেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিনাদোষে কারাগারে যেতে হয়েছে আমার স্বামীকে। দীর্ঘ ১৬ বছর কী যে যন্ত্রণায় কেটেছে তা বলতে পারব না। মেয়ের জামাইয়ের শোকে শেষ পর্যন্ত আমার মা-বাবা মারাই গেলেন। অপরাধ না করেও বিনাদোষে কারাগারে ১৬টি বছর কে ফিরিয়ে দেবে?

তারিফুলের বাবা শাহ আলম ও মা খোদেজা জানান, ছেলেকে যে এভাবে পাব তা ভাবিনি। তারিফুলকে বুকে ফিরিয়ে দেওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া।

এদিকে তারিফুলকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী। তাকে দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচন করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম