শূন্য থেকে কোটিপতি
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো মানিকগঞ্জের পঞ্চপাণ্ডবের নাম পরিচয়
মো. নুরুজ্জামান, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪১ এএম
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের ৫ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর; তারা পঞ্চপাণ্ডব নামে পরিচিত। শেখ হাসিনার আমলে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন তারা। ওই পাঁচজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছায়াতলে থাকতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকেই এরা পলাতক রয়েছে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তাদের নাম পরিচয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মদদে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন দুতলা বিশাল এক বাণিজ্যিক ভবন। রয়েছে ডেইরি ফার্ম। বিশাল মাছ চাষের পুকুর। এছাড়াও নামে-বেনামে কেনা কৃষি জমি।
ইউনিয়নের আরেক প্রভাবশালী সদর উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মফিজুর রহমান মফেল সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। আ.লীগের এই নেতা এলাকায় গ্রাম্য শালিসি বৈঠক থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ খাত, দলের পদ বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। তারও রয়েছে বাড়ি ও অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এদিকে বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন আ.লীগের সম্পাদক সুনীল সুত্রধর, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেনের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজের আখের গুছিয়েছে। সদর উপজেলা শ্রমিক লীগের সদস্য সচিব জসিম মোল্লা আ.লীগের যোগদান করেই শ্রমিক লীগের পদ বাগিয়ে নেয়। তিনিও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেক শুভ্রর দাপটে এলাকায় অবৈধ বালু ব্যবসা করে মাত্র দুই বছরেই কোটিপতি হয়েছেন। গ্রামে একতলা বাড়ি, সাভারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে পিছিয়ে নেই বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি দেওয়ান আব্দুল মান্নান। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাপট দেখিয়ে আখের গুছিয়েছেন। এলাকায় করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। মিতরা গ্রামের গৌর বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য নাছির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিলাম। বিনিময়ে আমার জমি তার নামে পাওয়ার করে দেই। কথা ছিল টাকা ফেরত দিলে চেয়ারম্যান আমার জমি ফেরত দেবেন। কিন্তু নাছির চেয়ারম্যান কথা রাখেননি। আমার জমিতে তিনি দোতলা বিল্ডিং করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেতিলা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, মফিজুর রহমান একটি গভীর নলকূপ দেওয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। সরকার পতন হলে এখন গভীর নলকূপ পাইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকেই এরা ৫ জন পলাতক রয়েছে। এবং বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন বর্তমানে বিএনপি পার্টি অফিস অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলায় কারাগারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রমজান মাহমুদ বলেন, এরা আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর। আ.লীগ সরকারের আমলে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছে। এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।