ওয়াসার গাড়ি চালকের দুর্নীতি
আয় বৈধ বানাতে স্ত্রীকে সাজান পোলট্রি খামারি

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক (সাময়িক বরখাস্ত) তাজুল ইসলাম। ১৯৮৯ সালে মাত্র ২ হাজার টাকা বেতনে চালকের সহকারী হিসাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। দুই বছর আগে বরখাস্ত হওয়ার সময় তার বেতন ছিল ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার স্ত্রী খাইরুন্নেসা বেগমের নামে রয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পদ। নগরীতে রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি। অথচ তার বৈধ আয়ের কোনো উৎসই নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে, তাজুলের অবৈধ আয়েই তিনি এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিজের অবৈধ সম্পদকে বৈধ করতে স্ত্রীকে পোলট্রি খামারিও সাজান তাজুল। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি তার। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার আদালত দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে।
জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২২ সালের ৬ মার্চ দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল তাজুল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিন বছর তদন্ত করে মঙ্গলবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন।
দুদকের আইনজীবী সানোয়ার আহমেদ লাভলু যুগান্তরকে বলেন, তাজুল ও খাইরুন্নেছার বিরুদ্ধে মহানগর সিনিয়র জজ আদালতের বিচারক নুরুল ইসলামের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। বৃহস্পতিবার আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি বিচারের জন্য বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে মামলাটি পাঠানো হয়েছে। ওই আদালতে এখন বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদে ২০০২ সালে স্ত্রীর নামে তিন শতক জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি করেন তাজুল। কাগজে-কলমে বাড়িটির নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয় ২৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা। কিন্তু দুদক গণপূর্ত চট্টগ্রামের তিনজন উপপ্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ পরিমাপ করে খরচের পরিমাণ প্রায় ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বলে নিরূপণ করে। এছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংকে নগদ টাকাসহ ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পায় দুদক, যা তিনি স্বামীর অবৈধ আয় দিয়ে অর্জন করেছেন।
দুদক জানায়, অবৈধ আয়কে বৈধ করতে আয়কর নথিতে স্ত্রীকে পোলট্রি খামারি সাজান তাজুল। তবে তদন্তে পোলট্রি খামারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এদিকে তাজুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে। দুর্নীতি ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর দুই বছর আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল ওয়াসা।