ভাবছিলাম বাঁচব না: জুলাইয়ে গুলিবিদ্ধ রনি
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে রনি আহমেদ (৩০)। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। থাকতেন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় ভাড়া বাসায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মধ্যে পড়েন তিনি। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই দুপুরে বাসায় ফেরার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করতে করতে সামনের দিকে যাচ্ছে। এ সময় নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হন। ছাত্রদের দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গুলি তার বাম পায়ের ঊরুর এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ জায়গা থেকে অনেক রক্তপাত হচ্ছিল। আশপাশে তেমন কেউ ছিল না, তখনো মনে হয়েছিল সে আর বাঁচবে না। তখন কালেমা পড়া শুরু করে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রামপুরার বনশ্রী এলাকার এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে জি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের এক মহিলার বাসায় নিয়ে গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক একজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে চলে যান।
পরে এ্যাডভান্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিপুলসংখ্যক গুলিবিদ্ধ মানুষ। সিট নাই, ফ্লোরে চিকিৎসা চলছে। ৩ নম্বর রোডের এফ ব্লকের ২৮ নম্বর বাসায় চলে আসি। সেখান থেকে চুপি চুপি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। ২৬ জুলাই ডাক্তার বলেন, এখানে আসার দরকার নেই। আসলে তুলে নিয়ে যাবে।
পরে ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি আসেন রনি। ভয়ে এখানে না থেকে পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে জানতে পারেন পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে ঢাকায় থেকে কারা এলাকায় ফিরেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে পরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। দীর্ঘদিন বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন।
রনি আহমেদ ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সাইন্স থেকে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। পরে ঢাকায় জেড থ্রি করপোরেশনে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানি এনারজিসিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে কর্মরত রয়েছেন।
রনি আহমদ বলেন, গুলিবিদ্ধ লাগার পর মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আল্লাহকে স্মরণ করে কালেমা পড়তে শুরু করি। কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন জানতে পারেনি। পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, উপরে চক্কর দেওয়া হেলিকেপ্টার থেকে আশপাশে নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়। গুলিতে ৪ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় বাম পায়ের ঊরুর উপরে ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ভাবছিলেন বাঁচব না।
তার মা নিলুফা বেগম বলেন, গুলিবিদ্ধ পায়ে আগের মতো শক্তি পাচ্ছে না। যেভাবে গুলি করেছে তাতে ওর ফিরে আসার কথা ছিল না, আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আশাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে রনি সুস্থ রয়েছে। তবে আগের মতো সেরে উঠতে সময় লাগবে।