দেশের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল সরকারি কলেজে পাওয়া গেছে বিশ টাকায় ‘মেয়েদের মন’। কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে বানানো দুই শতাধিক রকমের পিঠা নিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী পিঠা উৎসব। এ উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল বিশ টাকায় ‘মেয়েদের মন’ পিঠা।
২৩টি স্টলে এসব পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। মুখরোচক বাহারি এসব পিঠার আয়োজন দেখতে ও স্বাদ নিতে ক্যাম্পাস বহিরাগত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষেরও জমজমাট ভিড় লেগেছে। এত সব শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের দারুণ দৃষ্টি আকর্ষণের পিঠার তালিকায় ওঠে আসে ২০ টাকায় মেয়েদের মন।
ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এসব পিঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে শীতের এ মৌসুমে চতুর্থবারের মতো এ আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সরকারি গুরুদয়াল কলেজের শিক্ষক পরিষদের আয়োজনে ফুলেফুলে সজ্জিত ফিতা কেটে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর আ ন ম মুশতাকুর রহমান।
শিক্ষক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মো. মতিউরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন প্রমুখ। উদ্বোধন শেষে তারা পিঠার পসরা সাজানো স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
এই পিঠা উৎসবে- পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, মাংস পুলি, দুধ পুলি, নারকেল পুলি, দুধ চিতই, দুধ পোয়া, ঝাল পোয়া, মাল পোয়া, সেমাই পিঠা, ডিম পিঠা, মাংস-ঝাল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, জামাই পিঠা, রুট পিঠা, থামি পিঠা, অঙ্কন পিঠা, চিরুনি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, দুধ গুগল, বিস্কুট পিঠা, সমুচা পিঠা, ঝিলমিল পিঠা, ডিমের পুডিং, চিকেন চপ, প্রজাপতি পিঠা, চাপটি, টাকি পিঠা, চিতই, ডিম চিতই, দুধের সন্দেশ, ডোবা পিঠা, গোলাপ কাটা পিঠা, পাপড়ি পিঠা, মাংসের পুলি, পায়া পিঠা, শিমফুল পিঠা, অরেঞ্জ জেলি, বেলুনি পিঠা, গোলাপফুল পিঠা, ভ্যানিলা জেলি, মি ডুবা, শল পিঠা, দুধ পুলি, সুখ চিতই, মলই পিঠা, বিস্কুট পিঠা, খাল মশলা পিঠা, টমেটো ঝাল পিঠা, কুড়িমুড়ি পিঠা, নারিকেলের চিড়া, মাংসের মশলা পিঠা, এম পিঠা, এহন সুপি পিঠা, মিষ্টি ইত্যাদি নামের পিঠাসহ ২২টি স্টলে দুই শতাধিক রকমের পিঠা ঠাঁই পায়।
এসবের একেকটির স্বাদ একেক রকম। একেকটি দোকানে একেক ধরনের পিঠা থাকায় সবটির নামও জানা মুশকিল হয়ে ওঠে। তবে সবার মুখে মুখে ছিল ‘মেয়েদের মন’ জাতের পিঠা। এছাড়াও আকর্ষণীয় ছিল ‘হৃদয় হরণ’ ও ‘ব্যাকআপ’ জাতের ব্যতিক্রম এ তিনটি পিঠা।
এর মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বাঙালিয়ানা স্টলে ‘মেয়েদের মন’ নামে একটি পিঠা ছিল। যার দাম ২০ টাকা। এই পিঠা খেতে এবং দেখতে দর্শকরা ভিড় করেন স্টলে। কলেজ শাখা বিএনসিসি প্লাটুনের স্টলে দেখা গেছে হৃদয় হরণ ও ব্যাকআপ পিঠা।
শিক্ষার্থী জয়া বিশ্বাস বলেন, আমাদের স্টলে ব্যতিক্রমী একটি পিঠা রেখেছি ‘মেয়েদের মন’, দাম ২০ টাকা। এটা দেখতে অনেকেই আমাদের স্টলে ভিড় করছেন।
কলেজের শিক্ষার্থী শাপলা খাতুন বলেন, এত রকমের পিঠা আমরা নিজ হাতেই বানিয়েছি। এ পিঠাগুলো তৈরিতে বাড়িতে মাসহ অন্যদের সহযোগিতায় উৎসব আনন্দে তৈরি করেছি। এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা পিঠাগুলো বানানো শিখলাম ও পিঠার নামও শিখতে পেরেছি। এমন আয়োজন আনন্দের। দিনটি আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম মুস্তাকুর রহমান বলেন, এবার নিয়ে চারবার শীতকালে আমরা পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। এবার ২৩টি স্টলে ২১৩ জাতের পিঠা এসেছে। সব পিঠা অভিভাবকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে। এবার প্রতিটি স্টলেই নতুন নতুন ধরনের পিঠা তৈরি করে নিয়ে এসেছে শিক্ষার্থীরা। মূলত শিক্ষার্থীদের আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এমন আয়োজন। এ উৎসবটি শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে উপভোগ করছে। উৎসবে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরেরও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সরব উপস্থিতি ছিল।