ছেলের সামনে পিতাকে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
মাদারীপুর ও টেকেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের শাখারপাড় গ্রামে পূর্বশত্রুতার জেরে ছেলের সামনেই পিতাকে হত্যার দায়ে ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ হাকিম নুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর এ রায় দেয়। এ মামলায় ১৯ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেলার রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের শাখারপাড় গ্রামের মৃত আফেউদ্দিন মুন্সির ছেলে সাহেবালী মুন্সি (৫৫), একই গ্রামের জয়নাল মুন্সির ছেলে খোকন মুন্সি (৩৫), একই গ্রামের মৃত আমজেদ মুন্সির ছেলে শাহাবুদ্দিন মুন্সি (৪৫), মৃত ছালাম মুন্সির ছেলে হান্নান মুন্সি (৪৮) ও একই এলাকার মৃত তাজেল মুন্সির ছেলে লাবলু মুন্সি (৪৮)।
মামলার এজাহার ও বাদীপক্ষের আইনজীবী বয়ানে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের শাখারপাড় গ্রামের বাবুল হাওলাদার (৫৫) আত্মীয় বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে ফিরছিলেন। এ সময় কালিবাড়ী দক্ষিণ খেয়াঘাটের স্থানীয় আজিজুল হাওলাদারের দোকানের সামলে পৌঁছলে পূর্বশত্রুতার জেরে একই এলাকার সাহেবালী মুন্সি অন্তত ৩০ থেকে ৪০ লোকজন নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাবুল হাওলাদারের ওপর আক্রমণ চালায়। এ সময় বাবুল হাওলাদারের চিৎকারে তার ছেলে ইমরান হাওলাদারসহ স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন।
এরপরেও বাবুলকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে মুর্মূষু অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজৈর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরের দিন একই বছরের ৫ জানুয়ারি রাজৈর থানায় ৪২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এ মামলায় ২০১৬ সালের ২৪ মে ২৭ জনকে দোষী করে চার্জশিট দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩ আসামি এরই মধ্যে মারা গেছেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত বুধবার বিকালে রায় প্রদান করেন। রায়ে ১৯ জনকে বেকসুর খালাস দেন। বাকি ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। সেই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্তদের এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
নিহতের ছোট ছেলে আসাদুল হাওলাদার বলেন, আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে আসামিরা। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট হইনি। রায়ের কপি সংগ্রহ করে উচ্চ আদালতে যাব। আমার বাবা একটি চাঁদাবাজি মামলার সাক্ষী হওয়ায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে আসামিরা। আমরা উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাব বলে প্রত্যাশা করছি।
এ রায়ে আসামি ও বাদীপক্ষে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দুপক্ষেই উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে দাবি করেন। রায় প্রদান কালে ২২ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। একজন পলাতক রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এমারাত হোসেন খান বলেন, রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ হয়েছি। অধিকাংশ আসামিকে খালাস দেওয়ায় বাদীর সঙ্গে আলাপ করে আপিল করা হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়জুর রহমান হিরু বলেন, আসামিরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, এমন কিছুই প্রমাণ হয়নি। ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে; এই রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা আপিল করব।