কোলের শিশুকে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ভিডিও, সমালোচনার ঝড়
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম
শিক্ষকের টেবিলের উপর বসিয়ে হাতে বেত দিয়ে, তিন বছর বয়সি কন্যাশিশুকে দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান করালেন চরফ্যাশন উপজেলার ৩৯নং হাজারীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম।
কন্যাশিশুটি তার মেয়ে। ওই সময় তিনি শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে শিশুর পাঠদানের ভিডিওচিত্র মোবাইলে ধারণ করেন; যা পরে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন শিক্ষিকা।
ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে শিশুকন্যাকে ম্যাডাম আখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন- ‘ম্যাডাম যখন দ্বিতীয় শ্রেণির ইংরেজি ক্লাসে বাঘবাকুম পায়রা কবিতা শেখায়।’
এমন একটি ভিডিও তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করলে মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, এই শিক্ষিকা যদি প্রকৃত পড়াশোনা করে শিক্ষকতা পেশায় আসতেন তাহলে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করতেন না। তিনি সম্ভবত শ্রেণিকক্ষটাকে নিজের বসতঘর মনে করেছেন। ওনার কাছ থেকে আমাদের সন্তান কী ধরনের শিক্ষা অর্জন করবে?
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেছেন। জালিয়াতির পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছেন তার স্বামী শ্রমিক লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সবুজ। তার স্বামী চরফ্যাশন পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি থাকার সুবাদে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় নিজে অংশগ্রহণ না করে টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।
৩৯নং হাজারীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুন বলেন, এমন কাজ কোনো শিক্ষক করতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
ওই শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম জানান, দুষ্টুমির ছলে ওই ভিডিওটি তিনি ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। বিষয়টি এমন হয়ে যাবে তা আমার জানা ছিল না। এখনই আমি ভিডিওটি ডিলিট করে দেব।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাশেম উদ্দিন বলেন, শিক্ষিকার এমন কর্মকাণ্ডের কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, যদি কোনো শিক্ষক এমনটা করে থাকেন আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, বিষয়টিকে তদন্ত করে দেখা হবে।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে তাদের শিশুসন্তান নিয়ে যাওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তার শিশুকে দিয়ে শ্রেণির পাঠদান করানোর কোনো বৈধতা নেই। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।