সবচেয়ে কাছের মানুষই যখন ঘাতক
যুগান্তর প্রতিবেদন, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরীর রাথুরা গ্রামে দুই সন্তানের জননী লায়লা আরজুর (৬২) হত্যাকারী আর কেউ নয়, তার সবচেয়ে কাছের মানুষ স্বামী সেকেন্দার আলী নিজেই।
বাসার কাজের বুয়া সাহিদা আক্তারের (৪০) সঙ্গে পরকীয়াসহ দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রী লায়লাকে ভোরে জবাইকে করে হত্যার পর লাশ শয়ন কক্ষের খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে হত্যার নাটক সাজান সেকেন্দার।
শনিবার মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক সেলিনা আক্তারের আদালতে ঘাতক স্বামী সেকেন্দার আলী ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে নিজেই স্ত্রী লায়লাকে জবাই করে হত্যার সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
শনিবার বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুন। হত্যাকাণ্ডের চার দিনের মধ্যে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হয়েছে বলেও জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী লায়লা আরজু ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, থাইরয়েড ও ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং জরায়ু অপসারণ হয়েছিল। যে কারণে স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিকভাবে মেলামেশা না করতে পারায় দ্বিতীয় বিবাহ করতে চান সেকেন্দার আলী; কিন্তু স্ত্রী লায়লা কিংবা তার ছেলেমেয়ে কেউই বিয়ে করার অনুমতি না দেওয়ায় ভীষণভাবে নাখোশ হন সেকেন্দার আলী। সামান্য বিষয় নিয়েও মাঝে মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়াঝাটি হতো।
সেই সঙ্গে কাজের বুয়া সাহিদা আক্তারের (৪০) সঙ্গে পরকীয়ার সুবাদে তার সঙ্গে অবৈধভাবে শারীরিক সম্পর্ক করত বলেও আদালতে স্বীকারোক্তি দেন সেকেন্দার আলী।
স্ত্রী হত্যার পর স্বামীর সাজানো নাটক
ঘটনার দিন ১৫ জানুয়ারি বুধবার ভোরে স্বামী সেকেন্দার আলী স্ত্রী লায়লা আরজুর সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে নিজেই ঘরে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে স্ত্রী লায়লা আরজুকে। মৃত্যু নিশ্চিত করে গলা থেকে অনর্গল রক্ত বন্ধ করতে নিজেই কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় স্ত্রীর নিথর দেহটি শয়ন কক্ষের খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে বাজার করতে বের হন।
হত্যার দিন ঘাতক স্বামী পুলিশসহ সাংবাদিকদের জানান, কাঁচাবাজার করতে পার্শ্ববর্তী বাজারে যান তিনি। এ সময় সমবয়সি বন্ধুদের সঙ্গে চা-বিস্কুটসহ নাস্তা করে বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরেন। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মোটেও তিনি বিমর্ষ কিংবা না ঘাবড়িয়ে উল্টো নাটক সাজান। তিনি বলেন- বাজার করতে যাওয়ার ফাঁকে বাসায় দুর্বৃত্তরা ঢুকে স্ত্রী লায়লাকে হত্যার পর দুটি কানের দুল আর আলমিরায় থাকা দুই হাজার টাকা লুটে নেয়।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে সেকেন্দার আলীর স্ত্রী সাবেক এনজিও কর্মকর্তা লায়লা আরজু নির্মমভাবে খুন হন। এ ঘটনায় ১৬ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
মামলার রহস্য উদ্ঘাটন
মামলা রুজু হওয়ার পর মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও সহয়োগিতায় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘিওর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলাম মুকুল মামলার একমাত্র আসামি বানিয়াজুরী রাথুরা গ্রামের মৃত সামছুর রহমানের ছেলে সেকেন্দার আলী খানকে (৬৬) গ্রেফতার করে। হত্যার ঘটনার চার দিনের মাথায় শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া আসামির জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন।