প্রিয় নেতা বাবরকে দেখার প্রতীক্ষায় হাওড়পাড়ের মানুষ
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে তিনি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন। তার মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলের মানুষ।
দীর্ঘদিন পর প্রিয় নেতা মুক্তি পাওয়ায় নেত্রকোনা থেকে তার সমর্থক ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। এছাড়া যারা সেখানে যেতে পারেননি তারা প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন কখন নিজ এলাকায় আসবেন লুৎফুজ্জামান বাবর।
লুৎফুজ্জামান বাবরের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলায়। তিনি নেত্রকোনা-৪ (মদন মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
লুৎফুজ্জামানের মুক্তির পর পর মদন উপজেলা বিএনপির সভাপতি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. নূরুল আলম তালুকদার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যুগান্তরকে বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানসহ অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের প্রিয় নেতাকে পতিত স্বৈরাচারী সরকার কারাগারে আটকে রেখেছিল। বিভিন্ন মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে জেল দেওয়া হয়েছিল।; কিন্তু আল্লাহ আছেন, তিনিই ন্যায় বিচারক। সব মিথ্যা মামলা থেকে আজ মুক্তি পেয়ে মুক্ত আকাশ দেখেছেন।
খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুর রউফ স্বাধীন বলেন, যারা সাজানো মামলায় আমাদের নেতাকে ফাঁসির রায় দিয়েছিল। তারা আজ দেশছাড়া। তাদের জন্য ঝুলছে ফাঁসির দড়ি। এটাই হচ্ছে ইতিহাসের নির্মম সত্য। ইতোমধ্যে ফল পেতে শুরু করেছেন তারা। আমাদের নেতা, আমাদের সন্তান এখন মুক্ত। আদালত তাকে সাজানো মামলা থেকে রেহাই দিয়েছেন। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। তার আগমনের আশায় এখন হাওড়পাড়ের মানুষ প্রতীক্ষায় রয়েছেন।
মদনের বাগজান এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাবর ভাই এই ভাঁটি এলাকার প্রাণপুরুষ। তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নসহ অসংখ্য মানুষকে চাকরি দেওয়া এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে শোকরিয়া প্রকাশ করছি। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু বলেন, বাবর ভাইয়ের মুক্তির খবরে নেত্রকোনায় আনন্দের বন্যা বইছে। বিশেষ করে ভাঁটি উপজেলা হিসেবে খ্যাত মদন-মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরিতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে বয়ে যাচ্ছে এ আনন্দের ধারা। প্রিয় নেতাকে বরণ করতে নেত্রকোনার ও মদনের শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র তৈরি করা হয়েছে নানা রঙের তোরণ। রাস্তাঘাটে মানুষের মাঝেও উল্লাস বইছে। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, মাঠ-ঘাটে আড্ডায় শুধু বাবর ভাইয়ের মুক্তির কথা স্থান পাচ্ছে।
এদিকে লুৎফুজ্জামানকে বরণ করতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নেত্রকোনা থেকে প্রায় দুই সহস্রাধিক বাস, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন।
জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা আমাদের প্রিয় নেতাকে বরণের জন্য জেলা থেকে লাখো মানুষ ঢাকায় মিলিত হয়েছিলাম। হাওড়াঞ্চল থেকে মানুষ এসে ঢাকাকে জনসমুদ্রে পরিণত করেছে। তিনি আবারো এলাকার সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে হাল ধরবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা। আর ১৭ বছর পর আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার মুক্তির মধ্য দিয়ে দেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ প্রশস্ত হলো।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক যুগান্তরকে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার বাবরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে রেখেছিল। তাকে হত্যা করতে চেয়েছে। যারা তাকে ১৭টি বছর জেলে রেখেছে, তাদের বিচার কে করবে? বাবর গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে তিনি অত্যন্ত মূল্যায়ন করেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি সবারই কথা তিনি শুনতেন। তার কাছে গিয়ে কেউ কোনো দিন খালি হাতে ফিরে আসেনি। তার সময়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই তিনি সাধারণ মানুষের প্রিয় নেতা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লুৎফুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রউফ জুয়েল জানান, তারা তাদের প্রিয় নেতাকে নিয়ে শহিদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করছিলেন। সেখান থেকে বনানী কবরস্থানে লুৎফুজ্জামানের বাবা-মা এবং আরাফাত রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন। পরে গুলশান-২ এলাকায় নিজ বাসায় পৌঁছার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী সপ্তাহের মধ্যে নিজ এলাকায় আসার কথা রয়েছে।
লুৎফুজ্জামান বাবরের চাচাতো ভাই শিক্ষক মো. মাহমুদুর রহমান মীর্জা যুগান্তরকে বলেন, যারা আমাদের বাবরকে সাজানো মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছিল। তারা আজ দেশছাড়া। তাদের জন্য আজ ঝুলছে ফাঁসির রশি! এটাই হচ্ছে ইতিহাসের নির্মম সত্য। ১৭ বছর কারাগারে রেখে মিথ্যা মামলায় ফাঁসির রায় সাজিয়ে ছিল তারা আজ তাদের কর্মের ফল পেতে শুরু করেছে। আমাদের নেতা, আমাদের সন্তান এখন মুক্ত। আদালত তাকে সাজানো মামলা থেকে রেহাই দিয়েছেন। শেখ হাসিনা সাজানো মামলায় ফাঁসি দিয়ে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে শোকরিয়া প্রকাশ করছি। যারা অন্যায়ভাবে তাকে সাজা দিয়েছিল। আজ তারা তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত পাচ্ছে।