Logo
Logo
×

সারাদেশ

রায়পুরে গণপাঠাগার খালি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া

Icon

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৯ এএম

রায়পুরে গণপাঠাগার খালি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরে গণপাঠাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) বন্ধ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্র-শিক্ষক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এই পাঠাগারটি। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সকল প্রকার বই। ভবনের নীচতলায় পাঠাগার সরিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্যে চালুর প্রস্তুতিও চলছে গত দশদিন ধরে।

উপজেলার একমাত্র পাঠাগার পুনরায় চালুর বিষয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টার সময় (১৪ জানুয়ারি) শিক্ষানুরাগী আবদুর রবের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সমাজসেবককে নিয়ে ইউএনও তার কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। সন্ধ্যা ৬টার সময় ছাত্র প্রতিনিধি নাঈম ও আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রসমাজ ইউএনও ইমরান খানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এর ব্যত্যয় ঘটলে মানবন্ধন করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হবে বলে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের দাবি, একতলা ভবনটি দ্বিতল করা হচ্ছে। নিচতলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হলেও দ্বিতীয় তলায় পুনরায় লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হবে।

রায়পুর শহরের উপজেলা পরিষদ সড়কের মার্চেন্টস একাডেমির সামনে সরকারি জমিতে ২০২২ সালে লাইব্রেরি ভবনটি নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা দিয়ে পাঠাগার ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন সাবেক রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাস। সরকারি খাস জমিতে প্রায় ৯০০ বর্গফুট জমিতে গড়ে তোলা ভবনটি ২০২৩ সালে ৩ জানুয়ারি উদ্বোধন করে সাবেক জেলাপ্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ।

উদ্বোধনের পর থেকেই বইপ্রেমী পাঠকেরা এই গণপাঠাগার ব্যবহার করে আসছিলেন। পাঠাগার পরিচালনার দায়িত্বে একজন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রায়পুর শহরের পীর ফজলুল্লাহ সড়কে নির্মাণ হয় চারটি দোকান। যেসব দোকানের ভাড়া থেকে পাওয়া টাকায় পাঠাগারের পরিচালনা ব্যয় মেটানোর কথা।

সরেজমিন দেখা যায়, লাইব্রেরি ভবনটির দ্বিতীয় তলার কাজ চলছে। নিচতলায় বই রাখার শেলফগুলো এক স্থানে জড়ো করে রাখা হয়েছে। শেলফের কোনটিতেই বই নেই। চারজন শ্রমিক সেখানে ভবনের জানালা ইট দিয়ে বন্ধ করার কাজ করছেন। সাবেক ইউএনও অঞ্জন দাস পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয় পাঁচ হাজার বই দিয়ে। পাঠাগারটির জন্য ছয় লাখ টাকা তহবিলে রেখে গেছেন।।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি আলমগীর হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা জামানত নিয়ে পাঠাগার হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। জামানতের টাকা নেওয়ার পর একতলা ভবনটি দোতলা করার কাজ শুরু করা হয়। তবে এসব কাজের জন্য কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।

ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, গত নভেম্বর মাসে জামানতের ২০ লাখ টাকা নগদে ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছি। লাইব্রেরিতে থাকা বই সরিয়ে ভবন সংস্কারের কাজ ইউএনওর তদারকিতে হচ্ছে। সংস্কার শেষ হওয়ার পর তাঁকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে। ভবনের ফ্লোরটি তিনি ব্যবহার করবেন, তা এখনো ঠিক করেননি। ওষুধের দোকান, স্যানিটারি পণ্য বিক্রি অথবা ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির দোকান করার কথা।

চালুর আগে পাবলিক পাঠাগারটিতে বই কেনার জন্য এক লাখ টাকা অনুদান দেন ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গাজী মাহমুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘লাইব্রেরিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা খুবই হঠকারী এবং দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর ৪০টি দেশের লাইব্রেরিতে আমি গিয়েছি। কোথাও লাইব্রেরির ভেতরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখিনি।’

সাংস্কৃতিক সংগঠক ও শিক্ষানুরাগী আবদুর রব বলেছেন, পাবলিক লাইব্রেরিকে এভাবে তছনছ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একমাত্র লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পাঠকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাইব্রেরিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হলে পাঠের পরিবেশ নষ্ট হবে। আজ মঙ্গলবার সকালে ইউএনও আমাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠায় সাবেক ইউএনওকে যেসকল ব্যক্তি সহযোগিতা করেছেন, তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে ইউএনওকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, লাইব্রেরিটি দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। নিচতলাতে লাইব্রেরি ও দ্বিতীয় তলাতেই ফিটনেস ক্লাব হবে। সেভাবেই কাজ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম