Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঘন কুয়াশায় ঝরে যাচ্ছে পান, চাষীদের সর্বনাশ

Icon

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

ঘন কুয়াশায় ঝরে যাচ্ছে পান, চাষীদের সর্বনাশ

সপ্তাহজুড়ে ঘন কুয়াশার কারণে ঝরে যাচ্ছে পান পাতা। বহু কষ্টে ধার দেনা এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বরজ করার পর শীত মৌসুমের শুরুতেই চোখের সামনে শ্রমিকদের ঘামে শ্রমে ফলানো পান পাতা এভাবে ঝরে যাওয়ায় নিজেদের সর্বনাশ দেখছেন পান চাষীরা।

বরগুনা জেলার তালতলী ও আমতলী উপজেলার সর্বত্রই দেখা দিয়েছে এমন আশঙ্কা।

তালতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র পঁচাকোড়ালিয়া ও ছোটবগী ইউনিয়নে মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছেন চাষীরা। 

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ১৩৩ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গুলিশাখালী, চাওড়া, আঠারগাছিয়া ও আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে। 

শীত মৌসুমের শুরুতে ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারণে বরজের পান পাতা লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে। চাষীরা শৈত্য প্রবাহ এবং কুয়াশার হাত থেকে রক্ষার জন্য পুরো বরজ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়ার পরও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে একেকজন পান চাষী বরজ তৈরি করেছেন। নিজেদের চোখের সামনে এভাবে বহু ঘামে ও শ্রমে তৈরি করা তাদের পানের বরজের পাতা চোখের সামনে লাল হয়ে ঝরে যেতে দেখে অনেক চাষীই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ও ছোটবগী এবং আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী, ডালাচারা, চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, ঘটখালী, উত্তর ঘটখালী, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা, ঘোপখালীসহ বিভিন্ন গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- ঝরে যাওয়া পান বরজের বিবর্ণ চিত্র। বরজের সঙ্গে পানের লতা দাঁড়িয়ে থাকলেও ঠাণ্ডায় পান পাতা শুকিয়ে লাল হয়ে ঝরে মাটিতে পড়ে আছে।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী গ্রামের পান চাষী কপিল মাঝি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাই ধার-দেনা কইর‌্যা ১০ লাখ টাকায় ৭০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছি। দ্যাখেন আমার বরজের কি অবস্থা। শীত আর কুয়াশায় বরজের সব পান পাতা লাল হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বছর শেষে আমি ২ লাখ টাকাও ঘরে তুলতে পারমু না’।

গুলিশাখালী গ্রামের নজরুল প্যাদা বলেন, ‘এনজিও গোনে ৫ লাখ টাহা আইনন্যা হেই টাহা খরচ কইর‌্যা ৪০ শতাংশ জমিতে পান চাষ হরছি। শীত আর কুয়াশায় সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। পাতা সব ঝইর‌্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। অ্যাহন এনজিওর টাহা দিমু ক্যামনে হেই চিন্তায় আছি’।

ঘটখালী গ্রামের পান চাষী আক্কাচ হাওলাদার বলেন, ‘রিমালের সময় বইন্যায় বর ভাইঙ্গা সব শ্যাষ অইয়া গেছিল। ধার দেনা আর এনজিও গোনে টাহা আইন্যা আবার বর ঠিক হরছি। অ্যাহন শীত কুয়াশা আর বাতাসে সব পান পাতা নষ্ট অইয়া যাওয়ায় মোগো অইছে সর্বনাশ। অ্যাহন পোলা মাইয়া লইয়া কি খামু আর কি দিয়া এনজিওর কিস্তি দিমু, হেই চিন্তায় আছি। 

এভাবেই শত শত পান চাষী এ বছর চলতি শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে বরজের পানের ক্ষতি হওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে।

বরজের পান নষ্ট হওয়ায় তার প্রভাব পরেছে বাজারেও। তালতলী শহরের পান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক চল্লি (৩৬টি পান) বড় সাইজের বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ছোট সাইজের এক চল্লি পান ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ক্রেতাও এখন হিসাব করে পান কিনছেন। 

খুরিয়ার কেয়াঘাট এলাকার নারী পান ক্রেতা ছফুরা বেগম বলেন, ‘পানের দাম দুই তিন গুণ বাইর‌্যা গ্যাছে। যেই পান ১ মাস আগে ২০ টাহায় কেনতাম অ্যাহন হেই পান ৫০-৬০ টাহায় কিনি। অ্যাহন আর আগের মত পানি কিনি না। খাওয়াও কমাইয়া দিছি।

তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ছালেহ বলেন, ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত শীত এবং আবহাওয়া মেঘলা থাকার কারণে পান গাছে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। এ রকম হলে স্বল্প মাত্রায় জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া শৈত্য প্রবাহের হাত থেকে বরজ রক্ষার জন্য পলিথিন টাঙিয়ে বেড়া দেওয়া হলে ছত্রাকের আক্রমণ কম হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম